কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ভাটায়

উপজেলার আকাশি বিলে তিন কিলোমিটারে ১৩টি ইটভাটা আছে। এসব ভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের আকাশি বিল এলাকায় তিতান নদের মাটি কাটা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি
ছবি: প্রথম আলো

আইন লঙ্ঘন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় কৃষিজমি, গোচারণ ভূমি ও নদের পাড়ের মাটি কেটে ভাটায় ইট তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এর ৫ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ইট তৈরি করার জন্য খাল, বিল, নদ–নদী, হাওর–বাঁওড়, চরাঞ্চল বা পতিত জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া যাবে না। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের আকাশি বিলে তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে গড়ে ওঠা ১৩টি ইটভাটায় বিলের কৃষিজমি, গোচারণ ভূমি, জলাশয় ও তিতাস নদের পাড় থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর একেকটি ভাটায় প্রায় ৫০-৬০ লাখ ইট উৎপাদন (পোড়ানো) হয়।

বিলের ১৩টি ইটভাটার মাটি কাটার জন্য বিলে রয়েছে ৭টি খননযন্ত্র ও ৫০-৬০টি ট্রাক্টর। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটিভর্তি ট্রাক্টরগুলো বোরো জমির পাশ দিয়ে চলাচল করছে। এতে ধুলাবালুতে রাস্তার দুই পাশের জমির ধানের চারাও বিনষ্ট হচ্ছে। নিরীহ কৃষকেরা এর বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, একজন কৃষক জমির মাটি বিক্রি করলে পাশের জমির মালিকও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এভাবে পুরো বিলের চিত্র বদলে যাচ্ছে। এসব ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালী একটি চক্র।

এ বিষয়ে আকাশি বিলের মধ্যে গড়ে তোলা নিউ আশা ব্রিকসের মালিক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদের পাড় বা কৃষকের জমি থেকে আমরা সরাসরি মাটি আনি না। আমরা মাটি কিনি নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহজাহান নূর তাজ খাঁর কাছ থেকে। তিনি কোথা থেকে কীভাবে মাটি আনেন, তিনি ভালো জানেন।’

নদের পাড় ও কৃষিজমির উপরিভাগ থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে ইউপি সদস্য শাহজাহান নূর তাজ খাঁ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিলে শুধু আমি একা মাটি কাটি না। অনেকেই কাটেন। এ ছাড়া আমি নদের পাড় বা সরকারি জায়গার মাটি কাটি না। কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনে ভাটায় বিক্রি করি।’

কালীকচ্ছ ইউপি চেয়ারম্যান ছায়েদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি, কোনো কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ইটভাটাগুলো এ নিয়ম মানছে না।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরি অংশের উর্বর মাটি) কেটে ইট তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আকাশি বিলে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমরাও দেখেছি। ইতিমধ্যে সরাইল উপজেলার তিনটি ইটভাটাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অন্য যাঁরা বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, অচিরেই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’