কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের ঢল, লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি

ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রে করোনার টিকা নিচ্ছেন শতবর্ষী লুৎফর রহমান। সাতমাথা, বগুড়া শহর, ২৬ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় আজ শনিবার সকাল থেকেই করোনার গণটিকা কর্মসূচিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের ঢল নেমেছে। শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অধিকাংশ কেন্দ্রে মানুষের ঢল নামায় প্রচণ্ড রোদ ও গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জেলার দুই লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আজ সকাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিকা পেতে আগে থেকে কোনো ধরনের নিবন্ধন বা কাগজপত্র লাগছে না। জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, এমন ব্যক্তিরাও আজ নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোয় গিয়ে টিকা নিতে পারছেন।

বগুড়া শহরের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতাল, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৩টি স্থায়ী ও ৫৪টি অস্থায়ী কেন্দ্রে করোনার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে তিনটি ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র থেকেও শহর ঘুরে মানুষকে করোনার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, আজ সকালে একযোগে ৬০টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে ১০টার দিকে শহরের চারমাথা বাসা টার্মিনাল এলাকায় অস্থায়ী কেন্দ্রে গণটিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন, বগুড়া পৌরসভার মেয়র সামির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন বলেন, এক দিনে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। সকাল থেকেই শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। টিকা নিতে আসা মোহাম্মদ নাহিন নামের এক তরুণ বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। রোদে–গরমে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

বেলা একটার দিকে লাইনে দাঁড়ানো সিয়াম নামের এক তরুণ বলেন, ‘সকাল থেকে এই টিকাকেন্দ্রে হাজারো মানুষের ঢল। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অথচ এখনো টিকা নিতে পারিনি।’

মাহি নামের এক শিক্ষার্থী বেলা ১১টা থেকে ৪ ঘণ্টা টিকার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপরও তিনি টিকা নিতে পানেননি।

এদিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রেও সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে। বেলা একটার দিকে এই কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারি বাধে। এতে কিছুক্ষণ টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন বলেন, টিকা নিতে আসা লোকজন লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় করোনাভাইরাসের টিকার জন্য জেলায় নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৯। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৭ জন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ১৯ লাখ ৭০ হাজার ১৪৪ জন এবং বুস্টার ডোজ টিকা পেয়েছেন ৬৩ হাজার ১১২ জন।