কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। সেখানে ওই ইউনিয়নের কাঁঠালতলী এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তারানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কাদির। বক্তব্য দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব, সাবেক ইউপি সদস্য আহসান উল্লাহ, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। এতে অংশ নেন কয়েক শ নারী-পুরুষ।

বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। ২০১৭ সালের জুন মাসে জাবেদ ও তাঁর স্ত্রী সালমাকে ১২০টি ইয়াবাসহ পুলিশ আটক করেছিল। দুই–তিন বছর ধরে জাবেদ ও তাঁর সহযোগীরা কাঁঠালতলী এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এ ছাড়া জাবেদ এলাকায় ভূমিদস্যুতার সঙ্গেও জড়িত। কেউ এর প্রতিবাদ জানালে জাবেদ দলবল নিয়ে হুমকি–ধমকি দেন।

তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তানভীর মো. শরীফ বলেন, ‘চার দিন আগে জাবেদ তাঁর ফেসবুক লাইভে গিয়ে বলেছেন যে আমি তাঁকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছি। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি এমন অপপ্রচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। জাবেদের অপকর্ম ও অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আমরা তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাই এবং কাঁঠালতলী এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’

কাঁঠালতলী এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির হোসেন বলেন, জাবেদ এখন এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। জাবেদ ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় নিয়ে এসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল ও খাসজমির মাটি বিক্রিসহ মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। জাবেদের অত্যাচার ও অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁর অপকর্মের বিচার ও শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসী।

প্রকৌশলী সিরাজুল হক বলেন, সন্ত্রাসী জাবেদের বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিন সরকারি দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। ক্ষমতার দাপটের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেন না। সন্ত্রাসী জাবেদের অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মাঠে নেমেছেন।

কাঁঠালতলী এলাকার গৃহবধূ মর্জিনা বেগম জানান, জাবেদ এলাকায় তাঁর লোকজন নিয়ে প্রায়ই মাদক সেবন করেন। এরপর সন্ধ্যা হলে তাঁরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চান না। জাবেদ বাহিনীর বিচার চান এলাকাবাসী।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, জাবেদের বিরুদ্ধে কেউ এ পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালাম মিয়া বলেন, জাবেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জাবেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একটি রাস্তা নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষরা তাঁকে মারধর করতে আসে। তাঁরা মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে বলে দাবি জাবেদের।