কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা

গত ১৩ এপ্রিল থেকে নওগাঁ পৌরসভায় ছয়টি গণশৌচাগার ও বর্জ্যভূমি তৈরির প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু পৌরসভা সহযোগিতা না করায় আজও কাজ শুরু হয়নি।

নওগাঁ পৌরসভায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বর্জ্য পরিশোধনের স্থান) ও ছয়টি স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১২ এপ্রিল কার্যাদেশ পায়। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে তারা কাজ শুরু করতে না পারায় ওই প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছে।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও গণশৌচাগার নির্মাণের স্থান বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় তাদের কোনো দায় নেই।

নওগাঁ পৌরসভা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে নওগাঁ পৌরসভায় একটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য গত বছরের ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বাছাই শেষে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল কাজটি পায় মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৩ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পৌরসভা কার্যাদেশ পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৪৭ টাকা। ওই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ছাড়াও নওগাঁ শহরের ডিগ্রি কলেজের মোড়, পৌর বাজারের কিচেন মার্কেট, মুক্তির মোড়, সুপারিপট্টি, তুলশীগঙ্গা ও দয়ালের মোড়ে ছয়টি গণশৌচাগার নির্মাণের কথা রয়েছে। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, পৌরসভা সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ায় তাঁরা কাজ শুরু করতে পারছেন না। নওগাঁ শহরের ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পাশে পৌরসভার কোমাইগাড়ী মৌজায় স্যানেটারি ল্যান্ডফিলের স্থান নির্ধারণ করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। স্থানটিতে দীর্ঘদিন ধরে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে পৌরসভা। ওই স্থানে বর্তমানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ওই স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা পৌর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেখান থেকে এখনো ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি। এখনো প্রতিদিন ১০-১২ টন ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালির পরেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে গত ২৭ জুলাই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

* এই প্রকল্পের অধীনে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও ছয়টি স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ করার কথা। * এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৪৭ টাকা। * ১৩ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। * কাজটি পায় মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক ইকবাল শহরিয়ার বলেন, ‘চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল কার্যাদেশ পাওয়ার ১৫ দিন অপেক্ষার পরেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সাইট বুঝিয়ে দেয়নি। এ কারণে তাঁরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত ২৭ এপ্রিল চিঠি দেন। সাইট থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে কাজের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরে আরও তিনটি চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও সাইট বুঝে না দেওয়ায় আমরা চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেও যদি আমাদেরকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কাজ শুরু করব।’

তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পৌরসভার অনাগ্রহ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী যে স্থানটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের জন্য বাছাই করা হয়েছে, সেখানে আগে থেকে যেসব ময়লা-আবর্জনা রয়েছে, সেগুলো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই সরাতে হবে। তবে চুক্তির পর সম্প্রতি যেসব ময়লা-আবর্জনা পৌরসভা ফেলেছে, তা মেয়র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের স্থান ছাড়াও একটি গণশৌচাগার নির্মাণের জায়গার মালিকানা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টিও দ্রুত সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।’