ক্যানসার একে একে কেড়ে নিল দরিদ্র পরিবারের ৬ সদস্যের জীবন

আব্দুর রশিদের নাতি আল-আমিন (১০)
ছবি: সংগৃহীত

শেষ পর্যন্ত ১০ বছরের নাতিটিও মারা গেল। ইতিপূর্বে দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রী মরণব্যাধি ক্যানসারে মারা গেছেন। নাতি আল-আমিনের (১০) মাথায় টিউমার ধরা পড়ে প্রায় চার মাস আগে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে থেকে দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে নিয়ে তার পরিবার বাড়ি ফিরে আসে। ভোর ৪টায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কয়ারগাছি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ (৭৫)। তাঁর আর এক ছেলে শুধু বেঁচে রইলেন। তিনিই আল-আমিনের বাবা মঙ্গল আলী (৪০)। মঙ্গল আলীরও হাঁটুতে টিউমার দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার আব্দুর রশিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বসে বিলাপ করছেন। পরিবারটির একমাত্র শিশুকে বাঁচাতে না পেরে কান্নার শেষ নেই বৃদ্ধটির।

আব্দুর রশিদ বলেন, তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া গ্রামের আকবার আলীর মেয়ে সাহিদা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একে একে তিন ছেলে আর দুই মেয়ে হয়। ২০ বছর আগে স্ত্রী সাহিদা স্তন ক্যানসারে মারা যান। এরপর ছেলে আর পুত্রবধূদের নিয়ে চলছিল তাঁর জীবন। স্ত্রীর মৃত্যুর ছয় বছর পর বড় ছেলে রবিউল ইসলামের (৩০) মাথায় টিউমার হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে তিনি মারা যান। এর ১৪ বছর পর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে বড় মেয়ে খালেদা খাতুনের। তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর। এক বছর চিকিৎসাধীন থেকে খালেদাও মারা যান। খালেদার মৃত্যুর এক বছর পর স্তন ক্যানসারেই আক্রান্ত হন ছোট মেয়ে সেলিনা খাতুনও (২৪)। ৫ মাসের চিকিৎসা শেষে সেলিনাও মারা গেছেন। চার বছর আগে ছোট ছেলে সফি উদ্দিন (২০) যকৃৎ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কয়ারগাছি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। তাঁর আর এক ছেলে শুধু বেঁচে রইলেন, তাঁরও হাঁটুতে টিউমার দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ আজ ভোররাতে মারা গেল নাতি আল-আমিন। বৃহস্পতিবার তাঁদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে ফেরত পাঠায়। সন্ধ্যায় তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন, আর ভোর ৪টার দিকে আল-আমিনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

আব্দুর রশিদ বলেন, বড় ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে দ্বিতীয় পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ঘরে আল-আমিনের জন্ম। আল-আমিন খড়িখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আব্দুর রশিদ বলেন, এখন সন্তানদের মধ্যে বেঁচে থাকল শুধু মেজ ছেলে মঙ্গল আলী। কিন্তু মঙ্গলেরও ডান পায়ের হাঁটুর ভেতরের দিকে একটা টিউমার হয়েছে। তাঁরও কখন কী হয়, এই আতঙ্কে দিন কাটে।

বাড়ির কর্তা আব্দুর রশিদ জানান, তিনি সরকারি খাসজমিতে ঘর করে থাকেন। এ বছর সরকার তাঁকে একটি ঘর করে দিয়েছে। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সবকিছু শেষ করে ফেলেছেন। আর নাতি আল-আমিনের চিকিৎসায় অনেক ব্যয় করেছেন। এখন তাঁর পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

এ পরিবারটির বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, একটা পরিবারে এতজনের ক্যানসারের ঘটনা বংশগতভাবে হতে পারে। প্রথমে মায়ের হওয়ার পর পরে ছেলে-মেয়েদের হয়েছে। তবে একই পরিবারে এতগুলো মানুষের জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগে কখনো শোনা যায়নি।