ক্রাইম প্যাট্রল দেখে ব্যাংক লুট, খেলনা পিস্তল মেলে অনলাইনে

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় সোনালী ব্যাংক উথলী শাখায় লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
প্রথম আলো

ওষুধ ব্যবসায়ী সাফাতুজ্জামান রাসেল (৩০)। ঋণের টাকা শোধ করতে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করেন। ভারতীয় টিভি অনুষ্ঠান ক্রাইম প্যাট্রল থেকে তিনি এই ধারণা পান। এরপর আরও তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দিনদুপুরে ব্যাংক লুট করেন। লুটের জন্য ব্যবহৃত খেলনা পিস্তল তাঁরা অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করেন।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ব্যাংক লুটের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

গত ১৫ নভেম্বর জীবননগর উপজেলায় সোনালী ব্যাংক উথলী শাখায় দিনদুপুরে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত রোববার যশোর জেলার চৌগাছা ও জীবননগর দেহাটি এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন দেহাটি গ্রামের ফকিরপাড়ার সাফাতুজ্জামান রাসেল (৩০), মো. রকি (২৩), মো. হৃদয় (২২) ও মাহফুজ আহম্মেদ আকাশ (১৯)। সাফাতুজ্জামানকে চৌগাছায় আত্মীয় বাড়ি এবং বাকিদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, সাফাতুজ্জামান পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী এবং বাকিরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী।

ব্যাংক লুটের ঘটনায় পুলিশ অভিযানে উদ্ধার টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
প্রথম আলো

পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে লুটের ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, একটি খেলনা পিস্তল, খেলনা পিস্তলের ভাঙা অংশ, দুটি ধারালো চাপাতি, একটি ল্যাপটপ, দুটি মোটরসাইকেল, দুটি হেলমেট, এক জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস এবং একটি পিপিই উদ্ধার করে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস, দামুড়হুদা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেলসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর জোনের মহাব্যবস্থাপক খোকন কুমার বিশ্বাস এবং চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক খোন্দকার আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ দেখে সাফাতুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গীরা ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করেন। সাফাতুজ্জামান পেশায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। একটি এনজিও থেকে তিনি ঋণ নেন। পরিশোধের জন্য দৈনিক কিস্তি ৮০০ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিলেন। এই অবস্থায় ক্রাইম প্যাট্রলের একটি পর্ব দেখে ব্যাংক লুটের সিদ্ধান্ত নেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম
প্রথম আলো

পুলিশ সুপার বলেন, সাফাতুজ্জামান ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হৃদয়কে জানান। এরপরে সাফাতুজ্জামান ও হৃদয় মিলে তা রকি ও মাহফুজকে জানান। এঁদের মধ্যে রকি রাজি হন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজন মিলে ব্যাংক লুট করেন। লুটের টাকা থেকে এনজিও ঋণ পরিশোধ এবং একটি ল্যাপটপ ও পোশাক কেনেন সাফাতুজ্জামান। মাহফুজ লুটের সময় না থাকলেও ঘটনা জেনে যাওয়ায় টাকার ভাগ নেন।

আসামিদের ধরতে বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, মূল হোতা সাফাতুজ্জামান অনলাইন দোকান থেকে খেলনা পিস্তল কিনে ব্যাংক লুটে ব্যবহার করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। মূল হোতা প্রতি মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করায় ধরতে দেরি হয়েছে। ঢাকা মহানগর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ যৌথভাবে এই সফল অভিযান পরিচালনা করায় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশ সুপার। তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনায় ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ারের অবহেলাও দায়ী। তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না।

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা খোকন কুমার বিশ্বাস চুরির ঘটনার রহস্য উন্মোচন এবং টাকা উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন, ব্যাংকের যেসব শাখায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) নেই, উথলীসহ সেসব শাখায় অচিরেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে।

আরও পড়ুন