ক্ষীর খাসা, চন্দনচুর, শাহী, টক দইয়ের সমাহার

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মুজিব সড়কে
ছবি: আরিফুল গণি

সিরাজগঞ্জ শহরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা শুরু হয়েছে। পৌর শহরের মুজিব সড়কে মঙ্গলবার দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়। প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতীপূজা উৎসব উপলক্ষে পঞ্চমী তিথিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

এতে দইপ্রেমী ও উৎসবপ্রিয় মানুষ মেলায় ভিড় জমান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই দই মেলা শতবর্ষের ঐতিহ্যের মেলা বলা হলেও মেলার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো।

সোমবার বিকেল থেকেই মেলায় বাহারি দই আসতে থাকে। দোকানিরা মাটির হাঁড়িতে দইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। স্থানীয় রাজাপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচিসহ বগুড়ার শেরপুর এলাকার হরেক রকম দই মেলায় স্থান পেয়েছে। নানা রকম মাটির হাঁড়ির পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাত্রেও দই এসেছে। বিভিন্ন স্বাদের দই ভিন্ন ভিন্ন দামে বেচাকেনা হয়। মেলায় আসা দইয়ের স্বাদের ভিন্নতার কারণে দইয়ের নামও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন: ক্ষীর খাসা দই, চন্দনচুর, খাসা, শাহী, টক দই প্রভৃতি।

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলায় বেচাকেনা। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মুজিব সড়কে
ছবি: আরিফুল গণি

মেলায় দই কিনতে আসা প্রদীপ সাহা বলেন, এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী ভালো দই পাওয়া যায়। যে কারণে তাঁরা দই কিনতেই মেলায় আসেন। তবে এবার মেলায় দইয়ের দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। অপর ক্রেতা হেলেনা বেগম বলেন, ‘মেলার দই স্বাদে ও মানে খুবই ভালো। প্রতিবছর আমরা এই মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি।’

বর্তমানে মেলা দিনব্যাপী হলেও কোনো ঘোষের দই অবিক্রীত থাকে না বলে জানালেন জেলার এনায়েতপুর এলাকার রনি ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী রঞ্জিস কুমার। তিনি বলেন, মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার করোনার কারণে দই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মেলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের কারণে চিনি, দুধ, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক ও দইপাত্রের মূল্য বাড়ার কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয় সাহা প্রথম আলোকে বলেন, জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। রেওয়াজ অনুযায়ী দই মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে আয়োজন করা হয়। তবে তিন দিনের স্থলে মেলা এখন এক দিনব্যাপী হয়। কথিত আছে, সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন দেওয়ার রেওয়াজ ছিল।