খননে মিলল প্রত্ননিদর্শন

শনিবার মহাস্থান জাদুঘর চত্বরের বৈরাগীর ভিটায় খনন থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বের হয়ে এসেছে প্রাচীন দেয়াল। গত রোববার বগুড়ার মহাস্থানগড়ের জাহাজঘাটা এলাকায়
ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে গুপ্ত শাসনামলের (৩২০ থেকে ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ) নানা প্রত্ননিদর্শন মিলেছে। এ ছাড়া মহাস্থানগড় দুর্গনগরীর ভেতরে মিলেছে পাল শাসনামলের (৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ) চারটি বৌদ্ধ সমাধিসৌধ এবং একটি বৌদ্ধমন্দিরের স্থাপত্যকাঠামো।

আড়াই হাজার বছরের বেশি প্রাচীন মহাস্থানগড়ে এ বছরের ১ মার্চ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু হয়। টানা প্রায় দুই মাস ধরে মহাস্থানগড় দুর্গ নগরীর ভেতরে গোবিন্দভিটায় এ খননকাজ চলে।

শনিবার মহাস্থান জাদুঘর চত্বরের বৈরাগীর ভিটায় খনন থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত এই প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মহাস্থানগড়ে এবারের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম এবং প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। পরে মহাপরিচালক গোবিন্দভিটায় খননকাজ পরিদর্শন করেন।

খননকাজের মাঠ পরিচালক এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, খননকাজে গুপ্ত আমলের পোড়ামাটির ফলক, নর্দান ব্ল্যাক পলিশড ওয়্যারের বিশেষ ধরনের উত্তরাঞ্চলীয় কালো মৃৎপাত্রের টুকরা, প্রত্নযুগের টেরাকোটার ইটফলক, পোড়ামাটির তৈজসপত্র, মাটির প্রদীপ, প্রাচীন লিপিখচিত সিল, প্রত্নযুগের অলংকৃত ইট, ভগ্ন মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির তৈরি মানবমূর্তি, পোড়ামাটির খেলনার ভগ্নাংশ, তৈজসপত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির পাখি, প্রদীপ, কালির দোয়াত, পাথরের গুটিকা, পোড়ামাটির তৈরি পাশা খেলার ছক্কা, মাদুলিসহ নানা প্রত্ননিদর্শন মিলেছে। এ ছাড়া পাল আমলের চারটি বৌদ্ধ সমাধিসৌধ এবং একটি বৌদ্ধমন্দিরের প্রাচীন স্থাপত্যকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

খননকাজে জড়িত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খননে যেসব বৌদ্ধ সমাধিসৌধ ও মন্দিরের স্থাপত্যকাঠামোর সন্ধান মিলেছে, এর দক্ষিণাংশে আগে খননে একটি মন্দির কমপ্লেক্সের স্থাপত্যকাঠামোসহ প্রাচীন নিদর্শন ও মূল্যবান নানা প্রত্নসামগ্রী মিলেছে।

নাহিদ সুলতানা বলেন, বৈরাগী ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আরও প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবারের বৌদ্ধমন্দির ও বৌদ্ধ সমাধিসৌধগুলো পাল আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন আমলের রাজধানী ছিল মহাস্থানগড় বা পুণ্ড্রনগর। প্রাচীরবেষ্টিত পাঁচ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ হাজার ৫০০ ফুট প্রশস্তের মহাস্থানগড়ের ভেতরে ও বাইরের প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পরশুরাম প্যালেস, জিয়ৎ কুণ্ড, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর কুণ্ড, মুনির ঘোন, শিলা দেবীর ঘাট, বেহুলার বাসরঘর, ভীমের জাঙ্গাল, ভাসুবিহার, বিহার ধাপসহ নানা প্রত্ন ও স্থাপত্য নিদর্শন।

শনিবার প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধারণ দর্শনার্থীরা। প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত সাংবাদিকদের বলেন, এবারের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিলুপ্ত গুপ্ত ও পাল সভ্যতার নানা প্রত্ন নিদর্শন মিলেছে। খননের সার্বিক বিষয় অবহিত করতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।