খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন না কষ্টে জেলে পরিবার

১ নভেম্বর থেকে জাটকা ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। এই সময়ে সরকারি খাদ্যসহায়তা না পাওয়ায় জেলেদের মানবেতর দিন কাটছে।

উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর গত ১ নভেম্বর থেকে টানা আট মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকার, পরিবহন, বিক্রির ওপর সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে। এই সময়ে জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলে পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো সরকারি খাদ্যসহায়তা পৌঁছায়নি জেলেদের হাতে। ফলে দুর্দিন চলছে জেলে পরিবারগুলোতে।

যেসব জালের গড়া সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার বা এর কম, সেসব জালকে ছোট ফাঁসজাল হিসেবে দেখা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় এ ধরনের জাল দিয়ে উপকূলের নদ-নদীতে কেবল জাটকাই নয়, অন্য কোনো মাছও ধরতে পারছেন না কৃষকেরা। এই সময়ে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, খুটা জাল ও মশারি দিয়ে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ৯ ইঞ্চি আকৃতির ইলিশ জাটকা হিসেবে গণ্য করা হয়। নিষেধাজ্ঞাকালীন জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ।

সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের পুনর্বাসনে উপকূলীয় জাটকা সম্পৃক্ত জেলা বরগুনায় ৩৭ হাজার ৯০৩টি জেলে পরিবারকে চার মাস খাদ্যসহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে—এই চার মাসে দুই ধাপে এই সহায়তা দেওয়ার কথা। এই কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলে পরিবার মাসে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল সহায়তা পাবেন। দুই ধাপে (দুই মাস করে) এই সহায়তা বিতরণ করার কথা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে এই সহায়তার জন্য ২ হাজার ২৪০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

জেলার অন্যান্য উপজেলার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে জাটকা ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁরা অন্য কোনো মাছ ধরতে পারছেন না। সরকারি খাদ্যসহায়তা না পাওয়ায় কয়েক হাজার জেলে পরিবারের মানবেতর দিন কাটছে।

বরগুনা সদর উপজেলার রায়ভোগ গ্রামের জেলে মোজাম্মেল হক বলেন, মা ইলিশ ধরা বন্ধের সময় ২০ কেজি চাল তিনি পেয়েছিলেন। এখন সরকার আট মাসের জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার চার মাসেও খাদ্যসহায়তা পাননি। পরিবার নিয়ে তিনি কষ্টে আছেন।

বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী গ্রামের জেলে আনিসুর রহমান বলেন, মাছ ধরেই তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ চলে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার চার মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে তিনি এখন মাটিকাটার শ্রমিকের কাজ করছেন। তাঁর মতোই কয়েক হাজার জেলে বিষখালী নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জাটকা ধরা বন্ধের সময় জেলেদের খাদ্যসহায়তার চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে জেলার জেলেদের মধ্যে এই সহায়তার চাল বিতরণ করা হবে। প্রশাসনের সহযোগিতায় জাটকা ধরা বন্ধ রাখতে সফল অভিযান চলছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে জেলেদের মধ্যে গরু-ছাগল দেওয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞার আট মাস সময়ের মধ্যে চার মাস জেলে পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়। বাকি চার মাস জেলেদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয় না। এর ব্যাখ্যা দিলেন মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার আট মাসের মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, জুন—এই চার মাস উপকূলের নদীতে জাটকার উপস্থিত কম থাকে। তবে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে এ চার মাস উপকূলে নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণ জাটকা ইলিশ বিচরণ করে। জেলেরা যাতে নিষেধাজ্ঞাকালীন অবৈধভাবে নদ-নদীতে জাটকা শিকার না করে সে জন্য চার মাস জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়।

সরকারি সহায়তা জেলেপ্রতি না দিয়ে পরিবারকে দেওয়ার কারণেও অনেক সময় সহায়তার সমবণ্টন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। তবে এ বিষয়টি পরবর্তী জেলার মিটিংয়ে আমি উত্থাপন করব।’