খাল খনন শেষ হয়নি, দুর্ভোগ

উপজেলার কমলাপুর বাজার থেকে বুলগির বিল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খাল বর্তমানে মৃতপ্রায়।

খালের সব অংশ খনন করা হয়নি। এতে পানিপ্রবাহ নেই। কৃষকেরা খেতে সেচ দিতে পারছেন না। সম্প্রতি রাজৈর উপজেলার বুলগির বিল
ছবি: প্রথম আলো

এক বছর আগেও খালে পানিপ্রবাহ ছিল। নৌকায় কৃষিপণ্য পরিবহন করা হতো। খালের পানি চাষাবাদে লাগাতেন কৃষকেরা। বছর ঘুরতেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। পুনর্খনন শেষ না হওয়ায় খালে এখন পানিপ্রবাহ নেই। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নে ওই খালের অবস্থান। কমলাপুর বাজার থেকে বুলগির বিল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খালটি মৃতপ্রায়। পণ্য পরিবহনে সমস্যা ও সেচ–সংকটে এলাকার চাষিদের দুশ্চিন্তা দিন দিন বাড়ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) মাদারীপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেচ সুবিধার্থে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার দুটি খাল পুনর্খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কমলাপুর থেকে বুলগির বিল পর্যন্ত খালটি খনন শুরু করে বাজিতপুর ইউনিয়ন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। খননকাজ শেষ না হলেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, কমলাপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার কোনো রকমে খনন করা হয়েছে। বাকি অংশে খননকাজ দৃশ্যমান নয়। খালে পানির প্রবাহ নেই। এর দুই পাশে কয়েক হেক্টর ধানি জমি। জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য খালের পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। খননকাজ করার সময় খালটির কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়। খালটির দুই পাড় দিয়ে হেঁটে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। কৃষকেরা জানান, আগে খালে নৌকায় করে সহজে পরিবহন করা যেত।

স্থানীয় চাষি হিমাংশু শেখর সরকার বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম, খাল খনন হইলে আমাগো জন্য মঙ্গল। এখন দেখি খাল খনন কইরা আমাগো উপকারের চেয়ে ক্ষতি কইরা দিছে। আমরা এখন জমিতে সেচ দিতে পারি না। নৌকায় মালামাল টানতে পারি না। খালটির এমন মরা দশা হইব, তা আমরা চিন্তাও করতে পারি নাই।’

কমলাপুর এলাকার কৃষক প্রদীপ বৈদ্য বলেন, ‘আগে নৌকা নিয়ে খালের দেড় কিলোমিটার কৃষিপণ্য আনা–নেওয়া করতাম। এখন হেঁটে সব কাজ করতে হয়। খালে আগে ভালো মাছও পাওয়া যেত। এখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। ভালো সেচ না পেলে ধানের ফলন কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি আমরা।’

আরেক কৃষক সুখচাঁন সাহা বলেন, ‘খালটিতে গত বছরে খননকাজ শুরু করে। কিছু জায়গায় খনন করে রেখে দেয়। তারপর আর খনন করেনি। খালটি সুন্দরভাবে খনন করে দুই পাড়ে রাস্তা তৈরি করে দিলে আমাদের এলাকাবাসীর অনেক উপহার হইত।’

এ বিষয়ে বাজিতপুর ইউনিয়নের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির খাল খনন কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা খাল খননের কাজ ঠিকমতো করার চেষ্টা করেছি। কিছু জমির মালিকানা সমস্যা থাকায় কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এসব এলজিইডি জানে। তারা এসব জেনে–বুঝেই বিল দিয়েছে। আমাদের কাজে কোনো ভুল নেই।’

উপজেলা প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। কমলাপুর এলাকার কৃষক বা স্থানীয় ব্যক্তিরা খাল খনন নিয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সমিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে দেখব।’