খুলনায় লকডাউনের আগে বাজারে মানুষের ভিড়, বাসে যাত্রী কম

কঠোর লকডাউন শুরুর আগে খুলনা নগর থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন মানুষ। তবে যাত্রী তুলনামূলক কম। আজ সোমবার খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে।
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা জেলা ও মহানগরে আজ সোমবার রাত থেকেই শুরু হচ্ছে সাত দিনের কঠোর লকডাউন। তাই খুলনার মানুষকে দিনভর কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। নগরের বিভিন্ন মার্কেটে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা ছিল না।

লকডাউন চলাকালে নিত্যপণ্য ও ওষুধ বাদে প্রায় সব দোকানই বন্ধ থাকবে, বন্ধ থাকবে গণপরিবহনও। জেলা ও মহানগরের মধ্যে বাইরের কোনো বাস ও ট্রেন ঢুকতে পারবে না এবং বেরও হতে পারবে না। এ কারণে আগের দিনে যাত্রীর চাপ থাকার কথা থাকলেও বাসে ভিড় তুলনামূলক অনেক কম ছিল।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাসে যাওয়ার মতো যাত্রী খুবই কম। যে দু-একজন আসছেন, তাঁদের যেন ‘সাদরে বরণ’ করে নিচ্ছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। অনেকটা অলস বসে থেকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে বাসগুলো। যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকলেও পরিবহনশ্রমিকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

খুলনা-পাইকগাছা কাউন্টারে থুতনিতে সার্জিক্যাল মাস্ক আটকে বসে ছিলেন কাউন্টার মাস্টার সৈয়দ আলী। কাছে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে দেন। নিজ থেকেই বলতে থাকেন, ‘বেশিক্ষণ মাস্ক রাখা যাচ্ছে না, দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই মাঝেমধ্যে খুলে রাখি।’

সৈয়দ আলী বলেন, লকডাউনের আগের দিন তুলনামূলক যাত্রী বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাত্রী অনেক কম। মানুষ বেশ সচেতন হয়েছে, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বের হচ্ছে না। তা ছাড়া মানুষ এখন বুঝে গেছে, লকডাউনের মধ্যেও কোনো না কোনো মাধ্যমে চলাচল করা যায়।

পাশেই ছিলেন আলমগীর হোসেন নামের এক বাসচালক। তিনি বলেন, ১৫ মিনিট পরপর বাস যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী কম থাকায় ৩০ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যাচ্ছে।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই কাউন্টার থেকে একটি বাস পাইকগাছার উদ্দেশে ছেড়ে যায়, ওই বাসে যাত্রী ছিল মাত্র ১২ জন।

পাশেই ছিল খুলনা-মোংলা বাস কাউন্টার। সেখানে থাকা কাউন্টার মাস্টারের মুখেও মাস্ক ছিল না। নিজের নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী অনেক কম। মানুষ এখন লকডাউনকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ওই কাউন্টার থেকে যে বাসটি মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়, সেটিতে যাত্রী ছিল মাত্র ১০ জন।

কুষ্টিয়ায় লকডাউন হওয়ায় খুলনা থেকে কুষ্টিয়ার বাস যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। ওই কাউন্টার মাস্টার মো. সেলিম বলেন, মানুষ এখন বেশ সচেতন, করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বাইরে বের হচ্ছে না। যাত্রী তুলনামূলক অনেক কম। মুখে মাস্ক নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি হেঁসে অন্য কাজে মনোযোগ দেন।

বেলা একটার দিকে খুলনা ডাকবাংলো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ডাকবাংলো মোড় থেকে উত্তর দিকে যাওয়া ক্লে সড়কে মানুষ গিজগিজ করছে। বিভিন্ন মার্কেটের অধিকাংশ দোকানদারের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ছিল না হাত ধোয়া ও জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা।

রেলওয়ে হাসপাতাল সড়কের পাশে কয়েক শ কাপড়ের দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে থাকা বিক্রেতাদের কারোর মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। জানতে চাইলে এক দোকানি বলেন, ‘আমাদের ওসব লাগে না।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রোববার সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত খুলনায় ৬১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ওই সময়ে খুলনা জেলার তিনজন মারা গেছেন। তবে ওই সময়ের মধ্যে খুলনার তিনটি করোনা হাসপাতালে করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১০ জন।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া মানুষের অহেতুক ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে মহানগরে আটটি ও বিভিন্ন উপজেলায় দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন।