খুলনায় ৩০ বছর ধরেই নানা হালিমের চাহিদা

হজরত আলী (৭৮) হালিম বিক্রি শুরু করেন ১৯৯৩ সাল থেকে। সবাই তাঁকে নানা বলে ডাকেন। এ কারণে তাঁর হালিমের নামও হয়েছে নানা হালিম।

খুলনা নগরের সাউথ সেন্ট্রাল রোডে পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে নানা হালিমের একমাত্র বিক্রয়কেন্দ্র। গতকাল তোলা
ছবিঃ প্রথম আলো

রমজানের প্রথম দিন। গতকাল রোববার বেলা তিনটা। দুপুরের গরমে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল অনেকটা কম। তবে খুলনা নগরের সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনের ফুটপাতে মানুষের বেশ আনাগোনা। ফুটপাতের ওপরে শামিয়ানা টানানো। বিক্রেতারা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেসব দোকানের মধ্যে একটি দোকানের সামনে বড়সড় লাইন। দোকানের ব্যানারে বড় করে লেখা খাসির গোশত দিয়ে তৈরি ‘নানা স্পেশাল হালিম’। খুলনার মানুষের ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ এ নানা হালিম।

নগরের সাউথ সেন্ট্রাল রোডে পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে নানা হালিমের একমাত্র বিক্রয়কেন্দ্র। বিক্রি হয় শুধু রমজান মাসেই। দূরদূরান্ত থেকে ভোজনরসিকেরা আসেন সেখানে। রোজার সময় দুপুরের পরই শুরু হয় ভিড়।

নানা হালিম বিক্রেতা হজরত আলীর বয়স এখন ৭৮। হালিম বিক্রি শুরু করেন ১৯৯৩ সাল থেকে। ৩০ বছর ধরে শুধু রমজানেই হালিম বিক্রি করে আসছেন। মিষ্টভাষী মানুষটিকে সবাই নানা বলে ডাকেন। এ কারণে তাঁর হালিমের নামও হয়েছে নানা হালিম।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কেউ বাড়ি থেকে পাত্র নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া নানার দোকানেও মাটির পাত্র আছে। ক্রেতারা হালিম চাইছেন আর দোকানের সাতজন কর্মচারী ডেকচি থেকে মাটির পাত্রে ভরে তা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। টাকার হিসাব রাখছেন হজরত আলী।

হজরত আলীর সহকারীদের একজন মো. ফরিদ বলেন, ‘এখানে ছয় বছর ধরে কাজ করছি। আমরা মূলত সহায়তা করি। রান্না নানা নিজেই করেন। সকাল সাতটা থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুরের একটু আগে আগে রান্না ওঠে চুলায়। নানা হালিম তৈরিতে সোনামুগ ডাল, পোলাও চাল, গম, দেশি ঘি, খাসির মাংস ও নিজস্ব মসলা ব্যবহার করা হয়। বেলা দেড়টার মধ্যে রান্না শেষ হয়ে যায়। বেলা দুইটা থেকে এখানে বিক্রি শুরু হয়।’

হালিমের মান ঠিক রাখতে এখনো হজরত আলী নিজ হাতেই রান্না করেন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার হালিমের দামও বেড়েছে। এ বছর সেখানে ১৫০, ৩০০, ৫০০, ৮০০ ও ১ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের হালিম পাওয়া যাচ্ছে।

নগরের কদমতলা এলাকা থেকে হালিম কিনতে আসা মো. ফয়সাল বলেন, নানা হালিম খুলনার ইফতারির একটা ঐতিহ্য। দেরি করে এলে ভিড় বেশি হয়। আবার পাওয়া যায় না। তাই একটু তাড়াতাড়ি এসেছি। তারপরও মোটামুটি বেশ বড় লাইন।

একটি বেসরকারি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান খুলনা কার্যালয়ের কর্মী এডুইন বারিকদার বলেন, ‘নানা হালিম খুলনায় খুবই জনপ্রিয়। প্রত্যেক বছর আমাদের ইফতারির হালিম এ দোকান থেকেই কেনা হয়। এবারও অফিসের ইফতারির জন্য এখান থেকেই হালিম নিয়েছি।’

হজরত আলী বলেন, ‘রোজার সময় প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০ কেজি হালিম তৈরি করি। মাগরিবের আগেই শেষ হয়ে যায়। গত বছর করোনায় বিক্রি ভালো ছিল না। আবার এবার দাম বাড়ায় প্রথম দিন একটু কম করেছি।

তবে বিক্রি শুরুর প্রথম এক ঘণ্টাতেই অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে। খুলনার মানুষকে ভেজালমুক্ত আসল হালিমের স্বাদ দেওয়ায় আমার ব্যবসার মূল লক্ষ্য।’

গতকাল রোজার প্রথম দিনে খুলনা নগরে বেলা তিনটার কিছু পর থেকে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। নগরের ময়লাপোতা মোড়, সাতরাস্তা মোড়, পিটিআই মোড়, ডাকবাংলো মোড়, হেলাতলা মোড়, বড় বাজার এলাকা, ফেরিঘাট মোড়, শিববাড়ি মোড়, নিউমার্কেট এলাকা, রূপসা ফেরিঘাট, খালিশপুর এলাকা ও দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইফতারির বাজার বসেছে। বেশির ভাগ দোকানেই ছিল হালিম। এ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে রোল, সবজি চপ, ডিমের চপ, সাসলিক, খেজুর, ছোলা ভুনা, পেঁয়াজি, বেগুনি, আলু চপ, পাকোড়া, ফুলুরিসহ নানান পদ।