গবাদিপ্রাণীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে সফল আসমা

লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য অনেক আবেদন করেছেন। চাকরি হয়নি। তাতে আসমা আক্তার হতোদ্যম হননি এতটুকুও।

মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন জায়গায় গবাদিপ্রাণীর কৃত্রিম প্রজনন ও চিকিৎসাসেবা দিতে যান আসমা আক্তার। সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় বিয়ে হয় আসমা আক্তারের (৩২)। স্বামী বেকার। সংসার চালাতে শুরু করেন দরজির কাজ। পাশাপাশি চালাতে থাকেন লেখাপড়া। পাস করেন স্নাতকোত্তর। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য অনেক আবেদন করেছেন। চাকরি হয়নি। তাতে তিনি হতোদ্যম হননি এতটুকুও। বসে না থেকে শুরু করেন গবাদিপ্রাণী এবং হাঁস-মুরগির পুষ্টি, স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে কাজ। দক্ষতা অর্জন করেন গবাদিপ্রাণীর টিকা দেওয়ার। সেই আসমা আক্তার এখন গবাদিপ্রাণীর সফল কৃত্রিম প্রজননসেবা দানকারী।

আসমা আক্তারের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামে। তাঁর বাবার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দলুইপুর গ্রামে। ২০০৫ সালে তিনি কলারোয়া উপজেলার খরদো সালেহা হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ভর্তি হন একই উপজেলার সালিমপুর হাজী নাসির উদ্দীন কলেজে। সেখান থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। তবে এইচএসসি পরীক্ষার আগে তাঁর বিয়ে হয়ে যায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে। স্বামী বেকার। আসমা বাড়িতে দরজির কাজ শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। এই সময় তিনি দরজির কাজের সঙ্গে গবাদিপ্রাণী, হাঁস-মুরগির পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং টিকা প্রদান শুরু করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসমা আক্তার ব্র্যাক ও এসিডিআই/ভোকার সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগে ১৫ দিনের লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডারের (এলএসপি) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তিনি ব্র্যাক ও এসিডিআই/ভোকার সহযোগিতায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম প্রজননসেবা প্রদানকারী (এআইএসপি) হিসেবে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে এলাকায় তিনি গবাদিপ্রাণীর কৃত্রিম প্রজনন এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান শুরু করেন। আর এতেই আসমা খুঁজে পান জীবনসংগ্রামে দারিদ্র্য ঘোচানোর নতুন পথ। বর্তমানে ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা, পানিসারা এবং বাঁকড়া ইউনিয়নে কাজ করছেন। তিনি গত বছরের আগস্ট মাসে কিস্তিতে ৭২ হাজার টাকা দিয়ে একটা মোটরসাইকেল কিনেছেন। মুঠোফোনে ডাক এলে মোটরসাইকেলে তিনি বেরিয়ে যান। গাভি ও ছাগি—দুইয়েরই কৃত্রিম প্রজননসেবা প্রদান করেন আসমা। এ পর্যন্ত তিনি ৩৫০টির বেশি গাভি ও ছাগির কৃত্রিম প্রজননসেবা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে সাতটি ছাগি। প্রতি প্রজননে তিনি ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত টাকা পান। এর পাশাপাশি তিনি এলাকায় পশুপাখি লালনপালনে প্রশিক্ষণ দেন।

মেয়ে ফাহমিদা ইসরাত আফিয়াকে নিয়ে আসমার সংসার। মেয়ে বল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। স্বামী ফিরোজ হোসেন বর্তমানে মালয়েশিয়াপ্রবাসী। আসমা নিজেও বাড়িতে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করেন। মেয়ের লেখাপড়া, সংসারের কাজকর্ম সব একাই সামাল দেন আসমা।

ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জি এম আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘একজন নারী গাভি ও ছাগির কৃত্রিম প্রজননসেবা এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন, প্রথমে শুনে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। পরে ফিল্ডে গিয়ে আসমা আক্তারের কাজ দেখেছি। তিনি ভালো কাজ করেন।’