পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় একটি ধানখেতের আইল থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক মেয়েশিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে
ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ের বোদায় গভীর রাতে ধানখেত থেকে একটি নবজাতক উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রামবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী ও বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী শিশুটিকে উদ্ধার করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে নবজাতকটি হাসপাতালের নবজাতক বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে (স্ক্যানু ইউনিট) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়নের আওকারী পাড়া থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, তাঁদের ধারণা, শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই কেউ ধানখেতের আলে ফেলে রেখে গেছে। তবে আশপাশে খোঁজ নিয়ে এখন পর্যন্ত নবজাতকটির কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি।

নবজাতকটি উদ্ধারকারী আওকারী পাড়ার লাল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪৫) বলেন, ‘রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। প্রতিবেশী সুমিলা রানীর (৪৬) চিৎকারে উঠে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাই। পরে কাছে গিয়ে দেখি, একটি বাচ্চা পড়ে আছে। বাচ্চাটিকে একটি জোঁকও ধরেছে। পরে বাচ্চাটির নাড়ি (আমবিলিক্যাল কর্ড) কেটে বাড়িতে নিয়ে আসি এবং বাচ্চার শরীর পরিষ্কার করি। পরে স্থানীয় মেম্বারকে খবর দিই।’

নাসিমা বেগম কান্নার শব্দের কাছে গিয়ে দেখেন, ধানখেতের আলে কাঁদছে একটি নবজাতক। এমনকি ওই নবজাতকের শরীরে একটি জোঁক ধরায় শিশুটির শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
ধানখেতের আইল থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক মেয়েশিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতক বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে
ছবি: রাজিউর রহমান

সুমিলা রানী বলেন, তাঁদের বাড়িতে একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের বাড়ির লোকজন রাতে জেগে ছিলেন। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ বাড়ির পাশের ধানখেত থেকে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। ভয়ে কাছে না গিয়ে ডাকতে শুরু করেন প্রতিবেশীদের। খবর পেয়ে প্রতিবেশী নাসিমা বেগম কান্নার শব্দের কাছে গিয়ে দেখেন, ধানখেতের আলে কাঁদছে একটি নবজাতক। এমনকি ওই নবজাতকের শরীরে একটি জোঁক ধরায় শিশুটির শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান নাসিমা। পরে তাঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য নরেশ চন্দ্র রায়কে বিষয়টি জানান। তিনি প্রশাসন ও পুলিশকে খবর দেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া নবজাতকটির শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। আমরা নবজাতকের ওজন দুই কেজি পেয়েছি। হয়তো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এ ছাড়া সামান্য শ্বাসকষ্ট ছাড়া তার আর কোনো সমস্যা এই মুহূর্তে নেই। আমরা আপাতত স্যালাইন দিয়েছি। নবজাতকটিকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বোদার ইউএনও মো. সোলেমান আলী বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের পর সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন সমাজকর্মীর তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যে নারী ওই নবজাতককে উদ্ধার করে নাড়ি কেটেছেন, তাঁকেই আপাতত দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে নবজাতকটির বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।