নতুন জাতের গমের আবাদ করে রাজশাহীর বাঘার কৃষকেরা ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করলেন। কৃষকেরা বলছেন, রোগবালাই না থাকায় এই গম চাষে তাঁদের ব্যয়ও কম হয়েছে। বিঘায় ফলন হয়েছে ১৮ মণ পর্যন্ত। বিঘায় গড় ফলন ১৪ মণ ধরে বাঘার অর্থনীতিতে এ অর্থ যোগের হিসাব পেয়েছে কৃষি বিভাগ।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বাঘায় মোট ৬ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন জাতের বারি গম-৩০, বারি গম-৩২ ও বারি গম-৩৩ চাষ হয়েছে ৪ হাজার ২০৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৩৩ জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই গমের বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ১৮ মণ।
কৃষি অফিসের হিসাবমতে, বারি গম-৩০ চাষ করা হয়েছিল ২ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৯ টন বা বিঘায় ১৩ মণ হারে। বারি গম-৩২ চাষ করা হয়েছিল ৫৮৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ২ টন বা বিঘায় ১৪ মণ হারে। বারি গম-৩৩ চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৭ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ টন বা বিঘায় ১৫ দশমিক ৫ মণ হারে। এই হিসাবে, ৪ হাজার ২০৭ হেক্টর জমিতে নতুন জাতের গম আবাদে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫২ মণ বা ১৭ হাজার ৩৩৮ টন। এই পরিমাণ জমিতে পুরোনো জাতের গম চাষ করলে ১১ মণ হারে ফল হতো ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭ দশমিক ৫ মণ। নতুন জাত চাষ করার ফলে বাড়তি উৎপাদন হয়েছে ৮৬ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৫ মণ। ৩০ টাকা কেজি হিসাবে যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা।
তবে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের ফলন আরও বেশি হয়েছে। উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আল মমিন বলেন, তাঁরা পাঁচজন মিলে ১২ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বারি গম-৩৩ জাত চাষ করেছিলেন। বিঘায় তাঁদের ফলন হয়েছে প্রায় ১৭ মণ হারে। উপজেলার মনিগ্রাম পারসাওতা গ্রামের কৃষক সাহাবুল ইসলাম তাঁর চার বিঘা জমিতে বারি গম-৩৩ জাতের চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি তাঁর প্রায় ১৮ মণ ফলন হয়েছে।
উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক এনামুল হক বলেন, গত বছর তিনি বারি গম-৩৩ চাষ করে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮ মণ ফলন পেয়েছিলেন। এবারও তিনি এ জাতের গমের আবাদ করেছেন। আর গত মৌসুমের উৎপাদিত গম কৃষি অফিস এবং অন্য চাষিদের কাছে বীজ হিসেবে বিক্রি করেছিলেন। একই গ্রামের হাফিজুল ইসলাম ও বানিয়াপাড়া গ্রামের রাজু আহাম্মেদ তাঁর কাছ থেকে বীজ নিয়ে বারি গম-৩৩ চাষ করেন। তাঁদেরও বিঘায় প্রায় ১৮ মণ ফলন হয়েছে।
এনামুল হক আরও বলেন, এই গমের কোনো রোগবালাই হয় না। এ জন্য পরিচর্যার খরচও কম। আবার ফলনও ভালো।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে বাঘা উপজেলায় সব গমচাষিকে নতুন জাত আবাদের আওয়তায় আনা হবে। তাহলে উৎপাদন আরও বাড়বে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য সেক্টরের উন্নয়ন সবার কাছে সহজেই দৃশ্যমান হয়। কিন্তু নীরবে কৃষির যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা সেভাবে চোখে পড়ে না। নতুন জাতের গম উৎপাদনের গড় হিসাব ধরেই বের করেছেন, বাঘার অর্থনীতিতে এবার গম থেকে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে।