‘গরিব বলে আমাদের স্বজনদের উদ্ধারে সব শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে না’
টানা চতুর্থ দিনেও উদ্ধার হয়নি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের কোনো যাত্রী। নিখোঁজ যাত্রীদের ফিরে পেতে ধলেশ্বরীর তীরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অপেক্ষমাণ স্বজনেরা।
উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি স্বজনেরা বলেন, অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রিয়জন হারানোর বেদনা নরক যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী ধলেশ্বরী নদীর দুই তীরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ও স্লোগান দেন। যেকোনো মূল্যে জীবিত অথবা মৃত স্বজনদের খুঁজে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলছিলেন, এই দুর্ঘটনায় যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা সমাজের প্রভাবশালী কেউ না বলেই তাঁদের চার দিনেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আছেন তাঁর তিন সন্তান ও স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা উদ্ধারকাজে জড়িত, তাঁরা কি আসলেই উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন? আমরা গরিব মানুষ বলে আমাদের স্বজনদের উদ্ধারকাজে তাঁরা সব ধরনের শক্তি প্রয়োগ করছেন না। এমপি-মন্ত্রী কিংবা সরকারের বড় বড় লোক থাকলে উদ্ধার অভিযানের চিত্র ভিন্ন হইত।’
নিখোঁজ জোছনা বেগমের ভাই মানিক মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পদ্মা-মেঘনায় লঞ্চডুবির পর অনেক দ্রুত উদ্ধারকাজ হয়। ধলেশ্বরীর মতো ছোট একটা নদী থেকে চার দিনে একটা লাশও উদ্ধার হয়নি। এটা তাদের ব্যর্থতা না গাফিলতি, সেটা আমরা বুঝতেছি না।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান জানান, আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ধর্মগঞ্জ ও সিপাইবাড়ি ঘাটে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।
চার দিনেও কাউকে না খুঁজে পাওয়াটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না সবাইকে খুঁজে পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে। দুর্ঘটনার সময় ঘন কুয়াশা থাকায় কেউ দুর্ঘটনার স্থান নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। পাশের স্থানটি ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর মোহনা হওয়ায় এখানে নদীর গভীরতা, প্রশস্ততা ও স্রোত অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ যাত্রীরা স্রোতের তোড়ে দূরে ভেসে গেছেন। এ কারণে আশপাশের জেলাগুলোতেও আমরা খোঁজ রাখছি।’