গাংনীতে ইভিএমে নৌকা প্রতীকে জোর করে ভোট দেওয়ার অভিযোগ

মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে শনিবার ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়
প্রথম আলো

মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে জোর করে ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বোতামে টিপ মেরে ভোট নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শিশিরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ভোটাররা অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকে জোর করে ইভিএমের বোতামে টিপ মেরে দিচ্ছেন এজেন্টরা।

আজ শনিবার সকাল নয়টায় ওই কেন্দ্রে ষাটোর্ধ্ব ইসমাইল হোসেন ভোটারদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে যান। ভোট দেওয়ার পরে তিনি কেন্দ্রের বাইরে এসে বলেন, ‘বুথের সামনে একজন ব্যক্তি ইভিএমের নৌকা বোতামে টিপ মেরে দিচ্ছেন। শুধু কাউন্সিলর পদে ইচ্ছেমতো ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’

কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ছয়টি বুথের একটিতেও ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট নেই। কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে না পেরে মৌসুমী আক্তার অভিযোগ করেন, এভাবে জোর করে ইভিএমের বোতামে টিপ মেরে নিচ্ছেন তাঁরা। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কিছু বলছেন না।

কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টরা বলছেন, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা ঢুকতে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে পুলিশকে জানালে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট কেন্দ্রে না এলে কী করা যাবে? তাঁদের তো ডেকে এনে বসানো যাবে না।

কেন্দ্রের বাইরে প্রায় ২০ জন ভোটার জটলা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাছে যেতেই তাঁরা চিৎকার করে বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আহম্মেদ আলীর কর্মীরা জোর করে ইভিএমের বোতামে টিপ মেরে নিচ্ছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

সকাল সাড়ে আটটায় গাংনী পৌর নির্বাচনের ১ নম্বর বাঁশবাড়িয়া কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বাইরে নৌকার কর্মী–সমর্থকেরা পাহারা দিচ্ছেন, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে না পারেন। ওই গ্রামের ভোটার মওলা বিশ্বাস বলেন, ‘কেন্দ্রে যাওয়ার উপায় নেই। ছেলেপেলেরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভয়ে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারছে না।’

বেলা ১১টায় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষ ভোটারদের চারটি বুথ ঘুরে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা ভোটারদের সঙ্গে বুথে ঢুকছেন। প্রতিটি বুথে সামনে আওয়ামী লীগের একজন করে কর্মী বসে আছেন।

দুপুর ১২টায় গাংনী সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা সারি দেখা গেছে। পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। ভোটাররা অভিযোগ করেন, ভোটারদের ভোট দেওয়ার সহযোগিতার করার নামে নৌকা প্রতীকের বোতামে টিপ মেরে দিচ্ছেন।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আশরাফুর ইসলাম বলেন, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। নৌকার একচেটিয়া ভোট নেওয়ার জন্য তাঁরা সব রকমের কার্যক্রম করছেন।

এই পৌরসভায় মোট ভোটার ২০ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭৬০ ও নারী ১০ হাজার ৫৯৭ জন।