গাইবান্ধায় ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়

গাইবান্ধায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন কলেজছাত্র শাহরিয়ার। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শাহরিয়ার হোসাইনের। বাবা আবু সাঈদ একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বেতন-ভাতা পান না। চার সদস্যের সংসার। সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। একটুকরা খাসজমিতে তাঁদের বসবাস। বাবা গৃহশিক্ষকতা করে টেনেটুনে সংসার চালাতেন। করোনার কারণে তা-ও বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন শাহরিয়ার। তিনি ঘরে বসে আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। এখন ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি তিনি সংসারের হাল ধরেছেন।

শাহরিয়ারদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলা শহরের পূর্ব পাড়ায়। তাঁর বাবা আবু সাঈদ সদর উপজেলার খোলাহাটি নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। মা শাহনাজ বেগম গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহরিয়ার সবার বড়। ছোট ভাই আবু সালেহ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শাহরিয়ার ২০১৬ সালে স্থানীয় পত্রিকায় কম্পোজের কাজ নেন। এখানে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চলত। তাঁর বাবা টিউশনি করে খুব কষ্টে দিন চালাতেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তা–ও বন্ধ হয়ে যায়। শাহরিয়ার পত্রিকায় কাজ করার সময় ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখেছিলেন। তাঁর বাবার আয়–রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্কাই হোস্ট বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি।

স্কাই হোস্ট বিডি নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে ডোমেইন, হোস্টিং সেবা, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ তৈরি, বাল্ক এসএমএস সার্ভিস দিয়ে আসছেন। স্বল্পমূল্যে এসব সেবার পাশাপাশি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডিজাইন ও আইটি বিষয়ক সমস্যা সমাধানের কাজ করে যাচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি।

শাহরিয়ার ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, পর্তুগাল, লন্ডন, সৌদি আরব, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ পেয়েছেন। এসব কাজের বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। এসব কাজ করে বাংলাদেশি মুদ্রায় শাহরিয়ার মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাঁর অধীন স্থানীয় চার বেকার যুবক কাজ করছেন। তাঁরাও এখন স্বাবলম্বী।

শাহরিয়ার গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি রংপুর আইডিয়াল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি পলিটেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। এখন তিনি কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন।

গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই শাহরিয়ারের কম্পিউটারে কাজ করার প্রতি বেশ মনোযোগ ছিল। তাঁর স্বপ্ন ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করছেন তিনি। তিনি সফলও হয়েছেন।

কলেজছাত্র শাহরিয়ার বলেন, তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে ও ঢাকার কিছু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এসব কাজ শিখেছেন। ভবিষ্যতে তিনি তাঁর স্কাই হোস্ট বিডি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি আরও বলেন, যাঁরা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে এসব কাজ শুরু করতে পারছেন না, তাঁরা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্য নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাঁকে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে।