গাজীপুরে লকডাউনেও চলছে বাস–অটোরিকশা, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রী নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায়।
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে লকডাউনের পঞ্চম দিনেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর দিয়ে কিছু কিছু যানবাহন চলাচল করছে। শনিবার সকালে দু-একটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। বাসযাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছে না। মহাসড়কে লেগুনা, পিকআপ ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় লোকজন চলাচল করছে। প্রশাসনের যথাযথ তদারকির অভাবে ঢিলেঢালা লকডাউন চলছে।

আজ শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় টাঙ্গাইলগামী কথা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দেখা যায়। বাসটি চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডেকে ডেকে ওঠাচ্ছে। বাসচালকের সহকারী বাদশা মিয়া বলেন, ‘আশপাশে তো পুলিশ দেখছি না, তাই দাঁড়িয়ে কিছু যাত্রী ওঠাচ্ছি। খালি গাড়ি নিয়েই টাঙ্গাইল পর্যন্ত যাচ্ছিলাম। কিছু যাত্রী নিয়ে যেতে পারলে তেলের খরচটা উঠত। সকাল সাড়ে নয়টায় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে শত শত যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই হেঁটে, আবার কেউ কেউ ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে ওঠার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে কিছু মাইক্রোবাসের চালক যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী কলেজ গেটের পাশে প্রতিদিন পুলিশের কড়াকড়ি থাকলেও আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেই চিত্র দেখা যায়নি। ফলে ওই এলাকা দিয়ে সব যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। কোনাবাড়ী বাজার এলাকায় মানুষ গাদাগাদি করে চলাফেরা করছে। অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই।
কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, সকাল থেকেই চন্দ্রা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কোনো যান চলতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা দিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করেছে। মানুষ তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট যানে উঠতে দেখা গেছে। অল্প কিছু শিল্পকারখানার নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ কারখানার সেই সুবিধা নেই। যে কারণে অনেকেরই হেঁটে কারখানায় কাজে যেতে হয়েছে।

চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শরবত বিক্রি করছেন মো. সোহেল মিয়া। তিনি জানান, শরবত বিক্রি করেই তাঁর চারজনের সংসার চলে। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ চলে গেলে আবার বিক্রি শুরু করেন। দিনে ৫০০ টাকার মতো বিক্রি হয়।

জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ডে অলস সময় পার করছেন বাসচালক আফসার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সবাই চলছে। কারও কিছু থেমে নেই। শুধু আমাদের গাড়ির চাকা থেমে আছে। এর আগেও এমনটি হয়েছে। মিলকারখানা, অফিস, দোকানপাট—সবার কাজকর্ম চলে। কিন্তু গাড়ির চাকা না ঘুরলে আমাদের সংসারের চাকাটাও থেমে যায়।’
ওই বাসস্ট্যান্ডে তাঁর মতো পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অপেক্ষায় আছেন কবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।

চান্দনা এলাকার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট রেজাউল ইসলাম বলেন, চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে পণ্যবাহী ও জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না।