গাড়ি থামিয়ে চালকদের ঝগড়া, মাঝখানে প্রাণ গেল ছোট্ট রোগীর

গতকাল রাতে এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মামলার প্রধান আসামি মাইক্রোবাসের চালক নজরুল ইসলাম পলাতক
ছবি: প্রথম আলো

রাস্তায় মাইক্রোবাসকে সাইড না দেওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করেন মাইক্রোবাসের চালক। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে চালককে মারধর করা হয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা ক্যানসারে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রাতে নিহত শিশুর বাবা আলম মিয়া বাদী হয়ে মামলা করলে ওই মামলায় রাতেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার দোপাকান্দী গ্রামের আবদুর রহমান খানের ছেলে হানিফ খান (৪০) ও ভূঞাপুরের খুপিবাড়ি গ্রামের মৃত সুরুজ মণ্ডলের ছেলে মো. ইমরান (২৫)। মামলার প্রধান আসামি মাইক্রোবাসের চালক নজরুল ইসলামসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

নিহত ওই শিশুর নাম আফসানা আক্তার (৯)। সে গাইবান্ধা সদরের শাপলামিল এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে। সে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

গতকাল দুপুরে আফসানাকে ঢাকার মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিহত আফসানার বাবা আলম মিয়া বলেন, ‘মহাখালীতে ভর্তি করতে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। রোগী বাঁচবে না। তখন আমি চিন্তা করি রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাব। আমি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মেয়েকে বাড়ি নিয়া যাচ্ছিলাম। বাইপাইলে আসলে মাইক্রোবাসের লোকজন অ্যাম্বুলেন্স আটকাইয়া চাবি নিয়া যায়। এ সময় মেয়ে মারা গেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আফসানাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি বাইপাইল এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মাইক্রোবাস এসে অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে। এ সময় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর বাসস্ট্যান্ডে মাইক্রোবাসটিকে সাইড না দেওয়ার অভিযোগ তোলেন মাইক্রোবাসের চালক নজরুল ইসলাম। এতে মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সচালকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়।

একপর্যায়ে নজরুল ইসলাম তাঁর পরিচিত আরও কয়েকজন চালক ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় ওই অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে চালককে মারধর করা হয়। তখন আফসানার পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা কথা না শুনে অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে রাখেন। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এ ঘটনা চলতে থাকে। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সেই আফসানা মারা গেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

খবর পেয়ে পাশে থাকা বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি সংগ্রহ করে। তবে মাইক্রোবাসের চালকসহ তাঁর সহযোগীরা তখন সেখান থেকে সটকে পড়েন। এ সময় আফসানাকে দ্রুত আশুলিয়ায় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) খসরু পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এ সময় কেউ একজন আমাদের হাতে অ্যাম্বুলেন্সের চাবিটি দিয়ে দেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও থেকে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। পরে আমরা জানতে পারি, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ক্যানসারে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আফসানার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রাতে আফসানার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় গতকাল রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।