গোদাগাড়ীতে পদ্মার মরা শাখায় ভাঙন, হুমকিতে জনবসতি
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর একটি মরা শাখা প্রায় ২০ বছর পর আবার প্রমত্তা রূপ নিয়েছে। গত এক মাসের এই শাখার ভাঙনে উপজেলার নিমতলা গ্রামের ১৫টি বাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনো ঝুঁকির মুখে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মসজিদ, একটি মন্দির ও প্রায় ৫০০ পরিবারের ঘরবাড়ি। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে, কিন্তু ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে একটি বাঁশঝাড়ের নিচে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের সেন্টু রহমান (৬৫)। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে তাঁরা এখানে বাড়িঘর করে বসবাস করছিলেন। নদীর মূল ধারা এখানে ছিল না। একটি মৃত শাখা এই পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। তাতে বর্ষার সময় পানি থাকলেও শুকনা মৌসুমে পানি থাকত না। তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন, এই শাখা আর জাগবে না। শাখাটি মরে যাওয়ার কারণে এলাকার সেচ প্রকল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। সেই নদীর শাখায় এবার তুফান বয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে তিনি, তাঁর ছেলে আসমাউল হকসহ ১৫ জন বাসিন্দা তাঁদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এলাকাবাসী বড় বড় গাছপালা কেটে নিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর এখন যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। জায়গাজমি যা ছিল, সব নদীতে ভেঙে গেছে। এখন তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন।
রফিকুল ইসলামের অর্ধেক বাড়ি নদীতে নেমে গেছে, বাকি অর্ধেক তিনি এখনো সরিয়ে নেননি। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি ভেঙে নিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই অপেক্ষা করছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাতে পারে, তাহলে তাঁর বাড়িটা আর নতুন করে করতে হবে না।
গোলাম রসুল (৬০) ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা খরচ করে একটি পাকা বাড়ি করেছিলেন। সেই বাড়ির দুই পাশেই ভেঙে নদী ভেতরে ঢুকে গেছে। বাড়ির সামনে একটি বাঁশঝাড় থাকার কারণে শুধু বাড়িটি ত্রিভুজ আকারে রয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় পাকা বাড়িটি নদীর মাঝখানে ঝুপ করে পড়ে যাবে। গোলাম রসুল বলেন, তিনি সারা জীবন মহিষ পালন করে যা টাকা জমিয়েছিলেন, শেষ বয়সে এসে এই বাড়িখানা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম এসে বললেন, এই বাড়ি ভেঙে নিয়েই কী করবেন। তাঁদের বাড়ি করার তো জায়গা নেই। আর বাড়ি ভাঙতে লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। সে টাকাও তাঁদের কাছে নেই।
এলাকার বাসিন্দা সুমির উদ্দিন বললেন, তিনি একটি মসজিদ কমিটির সভাপতি। নিমতলা গ্রামে চারটি মসজিদ, একটি মন্দির এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামে ৫০০ পরিবারের বাস। বাড়িঘরসহ এসব প্রতিষ্ঠান একেবারে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
নিমতলা চকপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের নিচ দিয়ে পদ্মার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রাজিয়া খাতুন বললেন, বিদ্যালয়ের মাঠ নদীর ৫০ ফুট দূরেও নেই। এবারের নদীভাঙন নিয়ে তাঁরা খুব চিন্তায় রয়েছেন।
পদ্মার মরা শাখায় আবার জোয়ার আসার ব্যাপারে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। বলা যায় না নদী কখন তার গতি পরিবর্তন করবে। তিনি বলেন, অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানোর জন্য তাঁরা দুই ফেজে ১২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছেন। আর স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য একটি সমীক্ষা প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।