নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার (১৯) পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, তিনি নিজেও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।
বুধবার বিকেলে নগরের হালিশহরের বড়পোল এলাকার মইন্যাপাড়ায় অবস্থিত শেহেরীনের বাড়িতে যান মেয়র। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত ও ব্যথিত, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ধরনের ঘটনার দায় আমিও এড়াতে পারি না।’
ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং কোনো মায়ের কোল খালি না হয়, সে ব্যাপারে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারীদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মো. ইলিয়াস ও মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শেহেরীনের বাড়িতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সমবেদনা প্রকাশ করতে যান। এ সময় স্বজনেরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের ওপর রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গত সোমবার রাতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী শেহেরীনকে চোখের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান নানা হাজি জামাল। সঙ্গে ছিলেন শেহেরীনের মামা মো. জাকির হোসেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চশমা কিনে বাসায় ফিরছিলেন তিনজন। এ সময় আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে যান শেহেরীন। মামা ও নানা লাফ দিয়েও তাঁকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত তিনটায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেন। চট্টগ্রামে গত তিন মাসে নালা ও খালে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেহেরীনের করুণ মৃত্যু এখনো মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা। প্রিয় সন্তানকে অকালে হারিয়ে শোকে বিপর্যস্ত পরিবারের সবাই। তাঁদের সে শোক এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
এটা কি সিঙ্গাপুর
নিহত শেহেরীনের বড় ফুফু রোকসানা আক্তার আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘মেয়র কী করেন? কী জন্য চেয়ারে বসছেন? চট্টগ্রামকে বলে সিঙ্গাপুর বানাবেন। এটা কি সিঙ্গাপুর? আমাদের কলিজা খালি করা হয়েছে। এ রকম মেয়র আমাদের দরকার নেই।’
ক্ষুব্ধ রোকসানা আক্তারকে পরে স্বজনেরা সরিয়ে নেন। এ সময় খোরশেদ আলম শেহেরীনের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমাবেদনা প্রকাশ করে বলেন, সাদিয়ার মতো সন্তান যেকোনো পিতা-মাতার জন্য স্বপ্নের বীজ। নিদারুণ গাফিলতি ও কর্তব্যে অবহেলায় সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। একটি রাষ্ট্রে একজন শিক্ষার্থী হাঁটতে গিয়ে নালায় পড়ে তলিয়ে যাবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, এভাবে একের পর এক মৃত্যু হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ব্যথিত করে। জনগণ কোনো অবস্থাতেই কার দায় সেটি দেখতে চায় না। জনগণের প্রত্যাশা নিরাপদে হাঁটাচলার স্বস্তিকর পরিবেশ।
চট্টগ্রাম নগরের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চললেও সেবা সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও উদাসীনতার কারণে জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।