ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বিষয়ে সতর্ক করে উপকূলে মাইকিং
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আশঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে লাল পতাকা উড়িয়ে ঝড়ের সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবদুল আলিম বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত তাঁদের বিশ্বাস ছিল ঘূর্ণিঝড় আসবে না। কিন্তু আজ সোমবার সকাল থেকে খোলপেটুয়া নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি পূর্ব দিক থেকে ঝোড়ো বাতাস বইছে। এতে তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাত আলী গাজী। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হলেই তো গাবুরায় আঘাত হানে। একবার করে ঝড় হয়, আর সব শেষ হয়ে যায়। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে এলাকাবাসী চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকে।
গত বছরের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের অধিকাংশ কাঁচা ঘর পড়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার অনেক মানুষ তাদের বাস্তুভিটায় ফিরতে পারেনি। কেউ কেউ আবার ফিরে খুপরিতে বসবাস করছে। এ অবস্থায় আবার ঘূর্ণিঝড়ের খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে।
সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়ে গ্রামের আবদুল মুজিদ বলেন, আম্পানের পর এখনো ঘরদোর ঠিক করতে পারেননি। আবার ঝড় এলে সব শেষ হয়ে যাবে।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, ঝড়ের সতর্কবার্তা দিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। আজ সকাল ১০টায় ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে বাসিন্দাদের এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা অন্য কোথাও যেতে বলা হয়নি।
ইয়াস আঘাত আনতে পারে এমন আশঙ্কায় উপজেলার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান শ্যামরনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজার গিফারি। তিনি বলেন, সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, উপকূলীয় এলাকায় পাউবোর ১২৫ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হয়েছে, যাতে পানি ঢুকতে না পারে। তারপরও দুর্বল স্থানগুলোতে মাটি দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলায় পাউবোর ৮০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এসব স্থানে মাটি ফেলা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব বড় জলোচ্ছ্বাস না হলে অসুবিধা হবে না। তারপরও সিনথেটিক ব্যাগ মজুত করে রাখা হয়েছে।