চরাঞ্চলের বাদামচাষিরা বিপাকে

এই বাদাম আরও এক সপ্তাহ পরে খেত থেকে তুললে ওজন বেশি হতো বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

বন্যার আশঙ্কায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই বাদাম তুলছেন চাষি ইয়াসিন আলী। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে গত শুক্রবার
ছবি: প্রথম আলো

তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকার চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে দুই কূল প্লাবিত হয়ে গেলে বাদামখেত তলিয়ে যাবে। ফলে খেত থেকে আগাম বাদাম ঘরে তুলছেন চাষিরা।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল রোববার বিকেলে ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। আগামী কয়েকদিনে তিস্তা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ, ইচলি, মহিপুর, পশ্চিম ইচলি, কলাগাছি ও চল্লিশশাল গ্রামের চরাঞ্চলের চাষিরা বাদাম ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। চাষিরা জানালেন, এই বাদাম আরও এক সপ্তাহ পরে খেত থেকে তুললে ওজন বেশি হতো। সেই সঙ্গে বাদামও পরিপক্ব হতো। কিন্তু নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। চরাঞ্চলের বাদাম ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা।

মহিপুর এলাকার কৃষক মহুবার আলী ৩২ শতাংশ চরের জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। নদীর পানি বেড়ে গেলে বাদামখেত তলিয়ে গিয়ে পুরো বাদাম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি খেত থেকে বাদাম তুলে ঘোড়ার গাড়িতে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘ভুট্টা সময়ের মধ্যে খেত থেকে তুলিয়া বাড়িত নিয়া গেছি। কিন্তু বাদাম আরও এক সপ্তাহ খেতোত থাকলে পরিপক্ব হইল হয়। কিন্তু পানি ওঠার ভয়ে এই বাদাম আগাম তোলা হইতোছে।’

একই এলাকার ইয়াছিন আলী তাঁর ৩০ শতাংশ জমির বাদামও আগাম তুলছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নদীর পানি বাড়ছে। নদীর পানি আরও বাড়বে। ফলে চর পানিতে তলিয়ে যাবে। বাদাম নষ্ট হয়ে যাওয়ার থেকে আগে তুলে নেওয়া ভালো।

বাদামচাষি মোহসীন আলী বলেন, ‘সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সময়ে নদীর বান (বন্যা) হয় না। কিন্তু এবার শোনা যাইতোছে বান হইবে। অসময়ে বান হইলে হামারগুলার বাদাম শোগ শেষ হয়া যাইবে। তাই বাদাম তুলি ফেলা হইতোছে।’

লক্ষ্মীটারি ও কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, এ দুই ইউনিয়নে এক হাজারের বেশি মানুষ চরের জমিতে বাদাম চাষাবাদ করেছেন। পাউবোর পক্ষ থেকে বন্যা সতর্কবাণী দেওয়ার পর চাষিরা তড়িঘড়ি করে খেত থেকে আগাম বাদাম তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, অসময়ে তিস্তা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। বন্যা হতে পারে। সেই আশঙ্কায় চরের মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।

পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, তিস্তা নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। তাই আগামী এক সপ্তাহে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।