চলাচল নিয়ন্ত্রণে আটকানো হলো সেতুর দুই পাশ, তবু থামেনি জনস্রোত

চলাচল নিয়ন্ত্রণে ফরিদপুর কুমার নদের ওপর বেইলি সেতুর দুই পাশে লোহার রড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। আজ রোববার সকালে শহরের আলীপুর এলাকায়।ছবি: আলীমুজ্জামান

করোনাকালে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ফরিদপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর দুই পাশ স্টিলের পাত দিয়ে আটকে দিয়েছে প্রশাসন। তবে যে জনস্রোত রোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ঠেকানো যায়নি। ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতুর কার্নিশ দিয়ে, স্টিলের পাতের ফাঁক দিয়ে, কখনো ঝুলে চলাচল করছে মানুষ।

ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুমার নদ। নদের পূর্ব পাড়ে ফরিদপুরের বৃহত্তম মনিহারি, প্রসাধনী ও কাপড়ের বাজার হিসেবে খ্যাত তিতুমীর বাজার, পশ্চিম পারে বৃহত্তম কাঁচা বাজার হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার। এ দুই বাজারের সংযোগ ঘটানো বেইলি সেতুটির দুই পাশ স্টিলের পাত দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।

দুই পারের মধ্যে যোগাযোগের জন্য উত্তরে আলীপুর সেতু ও দক্ষিণে রথখোলা সেতু রয়েছে। তবে সেগুলো দিয়ে ওই দুই বাজারে দুই পাশের লোকজনকে যেতে হলে অন্তত এক থেকে দেড় কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয়। ফলে শহরের লোকজন বাজার করার ক্ষেত্রে এ সেতুর ওপরই নির্ভরশীল।

স্থানীয় লোকজন জানান, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২১ জুন থেকে ফরিদপুর পৌরসভায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। ওই বিধিনিষেধ শুরুর দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার বাঁশ দিয়ে সেতুটির দুই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও জনস্রোত রোধ করা সম্ভব না হওয়ায় গত শনিবার বিকেলে সেতুর দুই দিক লোহার পাত দিয়ে ঝালাই করে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের চলাচল বন্ধ করা যায়নি, বরং বাড়তি ভোগান্তি সহ্য করেই চলাচল করছে মানুষ।

বাঁশের ব্যারিকেড দিয়েও যখন জনস্রোত রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নত হলেই খুলে দেওয়া হবে।
মো. আলিমুজ্জামান, পুলিশ সুপার, ফরিদপুর

আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটা এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই দফায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরম ঝুঁকি নিয়ে লোকজন সেতুটির লোহার পাত মইয়ের মতো করে ডিঙিয়ে কিংবা সেতুর কার্নিশ দিয়ে চলাচল করছে।

শহরের লক্ষ্মীপুরের সাবজান নাহার (৩৯) বলেন, ‘জানতাম না সেতুটি এভাবে আটকায় দেওয়া হইছে। সেতুর কাছে আইসা বিপদের মধ্যে পইড়া গেছি।’ শহরতলির বাহিরদিয়া এলাকার হোসনে আরা বেগম (৩৩) বলেন, ‘ওষুধ কিনতে সুপারমার্কেটে যাব। এ পথ দিয়ে আইসা দেখি এই অবস্থা। পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়া সেতুর কার্নিশ দিয়া বাদুড়ঝোলার মতো করে পার হয়েছি। এভাবে মানুষকে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। আগে জানলে এ বিপদে পড়তে আসতাম না।’

শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল হক (৫৯) মনে করেন, যতই করোনার দোহাই দেওয়া হোক, কোনোমতেই এভাবে সেতুটি আটকানো ঠিক হয়নি। অন্তত একজন যেতে পারেন এমন পথ রাখা উচিত ছিল। তবে শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা (৩৮) সেতু আটকানোর পক্ষেই মত দিলেন। তিনি বলেন, সেতুটি আটকানো ঠিক আছে, তবে আসা–যাওয়ার মতো একটু ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।

ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। আজ রোববার সকালে ফরিদপুর শহরের আলীপুর এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, সেতুটি সড়ক বিভাগ ঝালাই করে আটকে দেয়নি। পুলিশ সম্ভবত আটকে দিয়েছে। হয়তো লোক চলাচল বন্ধ করার জন্য এটা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।

প্রায় সাত দিন ধরে ওই সেতুর মেরামতকাজ শুরু করেছেন সড়ক বিভাগের ঠিকাদার মো. সাইদুর রহমান। প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কার, জরাজীর্ণ জং ধরা অংশ অপসারণ করে নতুন স্টিল স্থাপন ও রং করার কাজ চলছে। ঠিকাদার সাইদুর রহমান বলেন, পৌরসভা সেতুটি আটকে দিয়েছে। এর ফলে চলাচলকারী লোকজনের সঙ্গে তাঁরাও বিপদে পড়েছেন। তাঁদের কাজের গতি ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সেতুর কাজটি শেষ হওয়ার কথা। সময়মতো কাজ শেষ করতে পারবেন কি না বুঝে উঠতে পারছেন না।

সেতু বন্ধের বিষয়ে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, সেতুটি পৌরসভা বন্ধ করেনি। এটি বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে সম্মতি দিয়েছে পৌরসভা।

জানতে চাইলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, সাময়িকভাবে সেতুটি আটকে দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নত হলেই খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এর কারণে পথচারী ও সেতুর মেরামতকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের একটু ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তারপরও এটি মেনে নিতে হবে। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়েও যখন জনস্রোত রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।