চিকিৎসক নেই, পশুসেবা ব্যাহত

গত ফেব্রুয়ারি মাসে নান্দাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসক একযোগে বদলি হন।

নান্দাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও হাসপাতাল। গতকাল শহরের নতুন বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আবু হানিফের হাতে ওষুধভর্তি থলে। মুখে চিন্তার ছাপ। তাঁর বাছুরটি প্রথমে লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে আনার পর হাজার টাকার বেশি ওষুধ কিনে চিকিৎসা করিয়ে নিয়েছেন। তা-ও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি।

বাছুরটি আবার আমাশয়ে আক্রান্ত হয়। এবার চিকিৎসার জন্য তাঁকে ৮৫০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। কিন্তু বাছুরটি ক্রমেই নেতিয়ে পড়ছে। হানিফ তাঁর বাছুরটির বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

আবু হানিফের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেষ সীমানা ঈশ্বরগঞ্জের সাটিহারি গ্রামে। গত মঙ্গলবার দুপুরে হানিফের মতো আরও অনেকে গবাদিপশু নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সাধারণ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসা হাসপাতালের ভেটেরিনারি সহকারীরা (ভিএ) করছেন। তবে ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) না থাকায় জটিল রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলছে চার মাস ধরে।

উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের মানিক মিয়া লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত একটি বাছুর নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, চার-পাঁচ দিন আগে বাছুরটির সারা শরীরে গুটি গুটি হয়ে ফুলে গেছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তবে চিকিৎসক পাননি। একজন ভেটেরিনারি সহকারী বাছুরটিকে দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন।

উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর থেকে মো. সাইদুজ্জামান ছাগলের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে এসেছেন। ছাগলটির প্রস্রাব বন্ধ। বড় চিকিৎসক পাননি। হাসপাতালের একজন সহায়তাকারী চিকিৎসা করছেন। বাছুরের শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগ করছিলেন সহায়তাকারী মো. গিয়াস উদ্দিন (৬০)। পরিচয় জানতে চাইলে গিয়াস বলেন, তিনি হাসপাতালের কেউ নন। তবে সকালে হাসপাতাল ও কার্যালয় খোলাসহ চিকিৎসকের সহায়তাকারী হিসেবে এখানে ৩০-৩৫ বছর ধরে কাজ করছেন। মাস শেষে স্যারেরা কিছু দেন।

গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, হাসপাতালে যখন চিকিৎসক ছিলেন, তখন প্রচুর রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর আগমন ঘটত। এই হাসপাতালে শল্যচিকিৎসার (সিজার) মাধ্যমে গবাদিপশুর বাচ্চা প্রসব করানো হতো। তবে চার মাস যাবৎ চিকিৎসক না থাকায় জটিল এই চিকিৎসাপদ্ধতি বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতালের একটি কক্ষে বসে গবাদিপশুর মালিকদের পরামর্শকমূলক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য) মো. মোকছেদ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন প্রচুর লোক তাঁর কাছে আসেন। যতটা সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা না থাকায় প্রচুর সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মো. রমজান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে গরুর ছবি তুলে চিকিৎসককে দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের এই দুই বাসিন্দা বলেন, কর্মকর্তা ও চিকিৎসক হচ্ছেন এই কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান দুটি পদ। এ দুটি পদ যদি শূন্য পড়ে থাকে, তাহলে এ উপজেলার বিপুল পরিমাণ পশুসম্পত্তির ভালোমন্দের দেখভাল কে করবেন?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে নান্দাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসক একযোগে বদলি হন। এর পর থেকে কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেই।

কর্মকর্তা ও চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে জানতে চেয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল আলমের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঞ্জুর মো. শাহজাদার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, এসব পদে সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিয়ে থাকে। যেসব উপজেলায় কর্মকর্তা ও চিকিৎসকের দুটো পদ শূন্য রয়েছে, সেসব স্থানে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, যাতে চিকিৎসার পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ চালানো যায়।