চুল কাটার নিয়ম বেঁধে দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নোটিশ, সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার

চুল কাটার দুটি নিয়ম বেঁধে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন হাওলাদার। এই নিয়ম মেনে চুল না কাটলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ায় তাঁর সেই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন হাওলাদার
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় লোকজন জানান, গত মঙ্গলবার চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ও সেলুনে সাঁটানো হয়। গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এমনকি এ বিষয়ে এক কিশোর প্রতিবাদ করায় তাকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে চেয়ারম্যানের ছেলে তুষারের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিয়নের সব সেলুনমালিক ও কারিগরদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা হয়, ‘এতদ্বারা জানানো যাচ্ছে যে ১৪ নং জাহানপুর ইউনিয়নের সব সেলুন দোকান মালিক ও কারিগরদের প্রতি দৃষ্টি আকর্শন করছি যে সুন্নতি কাটিং ও ডিফেন্স-আর্মি কাটিং ব্যাতিত অন্য কোনো কাটিং দেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউপি চেয়ারম্যানের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল নোমান বলেন, চুল কাটার বিষয়ে জাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এ রকম নোটিশ বা নির্দেশনা কোনো চেয়ারম্যান বা প্রশাসনের কেউ জারি করতে পারেন না।

ইউএনও আরও বলেন, তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে এ রকম বিজ্ঞপ্তি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ও সেলুনে সেঁটেছেন। তবে বিভিন্নজনে নানা বাজে মন্তব্য ও মুঠোফোনে নানা বাজেকথা বলার কারণে নোটিশ-বিজ্ঞপ্তি তুলে ফেলেছেন। ইউএনও বলেন, ‘আমি খবর নিয়ে জেনেছি। বিজ্ঞপ্তিটি অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। যদি কারও বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান কোনো ব্যবস্থা নেন, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন হাওলাদার ২৫ অক্টোবর তাঁর ইউনিয়নের মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে চুল কাটার ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করেন। নির্দেশনাটি কাগজে ফটোকপি করে ২৬ অক্টোবর চেয়ারম্যান স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে ইউনিয়নের বাসিরদোন বাজার, জলিল ব্যাপারীরহাটসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দেন। স্থানীয় সেলুনগুলোতে গিয়ে নির্দেশনা পালনের জন্য মৌখিকভাবে জানানো ও মাইকিং করা হয়।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। একপর্যায়ে আজ চেয়ারম্যান তাঁর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সেলুনে যেই নোটিশটি দিয়েছি, তা আইনি প্রক্রিয়ার–বহির্ভূত হয়েছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিছু মুরব্বিদের কথায় দিয়েছিলাম। তুলে নিয়েছি সেই নোটিশ।’

এ ব্যাপারে নাজিম উদ্দিন হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, করোনার সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর চুল লম্বা হয়ে গেছে। অভিভাবকেরা চাপ প্রয়োগ করে চুল কাটাতে পারছে না। তাই তিনি ২৫ অক্টোবর স্থানীয় মুরব্বি–অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে নোটিশ জারি করেন। সবাই প্রশ্ন তোলায় তিনি বিজ্ঞপ্তি তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিশোরকে মারধর করার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার ছেলে তুষারের সঙ্গে স্থানীয় জসিমের ছেলের একটু বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। তবে আমি সেটি সমঝোতা করে দিয়েছি।’