চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যার পর দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

শনিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত চেয়ারম্যানপ্রার্থী আশরাফুল হকের মেয়ে আফরোজা সুলতানা
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল হককে (৫৫) পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর বিষয়টিকে দুর্ঘটনায় নিহত বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

শনিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন আশরাফুল হকের বড় মেয়ে আফরোজা সুলতানা গীতি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে গাবতলী মডেল থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে তাড়িয়ে দেন এবং বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নিহত আশরাফুল হক সুখানপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি এবং নেপালতলী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলার ডঁওর গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বাবার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদত হোসেন তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করতে এরপর তিনি বাবার ঘনিষ্ঠ সহচর সেলিম মোল্লাকে অর্থের বিনিময়ে হাত করেন। প্রথমে প্রচার-প্রচারণায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন। পরে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন ২৬ জানুয়ারি বাবা নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভায় যোগ দিতে বগুড়া শহরে যান। সভা শেষে ঘনিষ্ঠ সহচর সেলিম মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া শহরে চোখের ডাক্তার দেখান। এরপর মোটরসাইকেলযোগে গাবতলী ফেরার পথে শাহাদত হোসেন তিনটি মোটরসাইকেলে লোকজন নিয়ে বাবার পথরোধ করেন। তাঁদের মধ্যে শাহাদত হোসেন বাবাকে হত্যার হুকুম দেন। সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মোল্লা তাঁর জ্যাকেটের ভেতর লুকিয়ে রাখা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে বাবার মাথার পেছনে আঘাত করেন। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে বাবা মোটরসাইকেল চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে একপর্যায়ে রাস্তার পাশে পড়ে যান। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হত্যাকারীরা পালিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সেলিম মোল্লা এটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনার পর গাবতলী মডেল থানায় মামলা করতে গেলেও তৎকালীন গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম মামলা না নিয়ে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বাধ্য হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার আদালতে সেলিম মোল্লা, শাহাদত হোসেনসহ অন্যদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার এবং সঠিক বিচারের দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গাবতলী মডেল থানা থেকে সদ্য বদলি হওয়া ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আশরাফুল হককে হত্যার আলামত মেলেনি। থানায় হত্যা মামলা দিতেও কেউ আসেননি।

গাবতলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি সুখানপুকুর ইউপি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।