চৌমুহনীতে মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, কাল ১৪৪ ধারা
নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের একটি বিশাল মিছিল থেকে হিন্দুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, একাধিক মন্দির ও বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বেলা সোয়া দুইটা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে হামলা-ভাঙচুর চলে। বিকেল পাঁচটার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আগামিকাল শনিবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চৌমুহনী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) শাহ এমরান সন্ধ্যা ছয়টায় প্রথম আলোকে বলেন, জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মুসল্লি একযোগে মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মন্দিরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিভিন্ন মন্দির ও দোকানপাটে হামলা চালান। রাম ঠাকুর আশ্রমের সামনে দুটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার প্রতিবাদে জুমার নামাজ শেষে বেলা দুইটার দিকে বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে শত শত মুসল্লি চৌমুহনী শহরের কাছারি বাড়ির মসজিদ এলাকার মূল সড়কে জড়ো হন। এরপর বিশাল মিছিল বের করা হয়। একপর্যায়ে মিছিল থেকে শহরের প্রধান সড়কের উত্তর পাশের শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানের সাইনবোর্ড দেখে দেখে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
মিছিলকারীরা শহরের কলেজ রোডে ঢুকে আশপাশের অনেক দোকানে এবং রামঠাকুর আশ্রম, রাধা মাধব জিওর মন্দির, ইসকন মন্দিরসহ প্রায় সব মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর চালান। এ সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া বাড়িঘর লক্ষ্য করে প্রচুর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। বিক্ষোভকারীরা মন্দিরের সামনে ও আশপাশে থাকা হিন্দুদের পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় চৌমুহনী ইসকন মন্দিরে থাকা যতন সাহা (৪২) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় রাবেয়া প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা আহ্বায়ক বিনয় কিশোর রায় প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হামলা-ভাঙচুরের তাণ্ডব চললেও প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি।
বিনয় কিশোর রায় বলেন, অনেক লোক হামলায় আহত হয়েছেন। হামলার শিকার অধিকাংশ লোক ভয়ে চিকিৎসার জন্যও বের হতে পারছেন না।
রাত সোয়া আটটায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান প্রথম আলোকে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। নতুন করে যাতে কোন সহিংস ঘটনা না ঘটে সে জন্য শনিবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চৌমুহনী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। হামলায় পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামছুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে চৌমুহনীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের প্রচেষ্টায় বিকেল পাঁচটার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে জেলার চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি উপজেলা সদরের একটি মন্দিরের অদূরে নির্মিত তোরণ সামান্য ভাঙচুর করে। এ ছাড়া সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনিসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছেন।