ছাত্রী ধর্ষণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মাঠে শিক্ষক সমিতি

বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থানীয় লোকজনের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি
ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থানীয় লোকজনের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে টুঙ্গিপাড়া-গোপালগঞ্জ সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য এই পৈশাচিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি গোপালগঞ্জ থেকে সারা দেশে এ নজির সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবির প্রতি সোচ্চার থাকব। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই নিরাপদ থাকবে; শিক্ষা, গবেষণা, উন্মুক্ত চিন্তার সুযোগ পাবে। এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সেই নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করব।’ শিক্ষার্থীরা সহিংসতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন শাহাজাহান, প্রক্টর রাজিউর রহমান, শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট ফায়েকুজ্জামান টিটো, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মহিলা হলের প্রভোস্ট বাঁধন মনি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামসুল আরেফিন প্রমুখ।

শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোনাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা দিনভর ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে তাঁরা ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে অবরোধ তুলে নেন।

গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর চার দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে জনসমক্ষে তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা ও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় লোকজনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করা ও সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া।

আন্দোলনের তৃতীয় দিনে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করেন বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ছবিটি আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে তোলা
ছবি: নুতন শেখ

আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ছয়জনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের একটি দাবি পূরণ হয়েছে। বাকি তিন দফা পূরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আমাদের চারটি দাবির মধ্যে একটির আংশিক পূরণ হয়েছে। বাকি দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

এ সময় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন শফিকুল ইসলাম। কর্মসূচির মধ্যে আছে শিক্ষকদের মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, চোখে কালো কাপড় বেঁধে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ, ধর্ষকদের প্রতীকী ফাঁসি দেওয়া, বিকেল ৩টায় উপাচার্যকে আন্দোলনের মঞ্চে আসার আহ্বান জানিয়ে ৪ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানা, বিকেল ৪টায় ছাত্রীদের হলে কর্মসূচি, সন্ধ্যা ৭টায় মোমবাতি প্রজ্বালন করে আলোর মিছিল করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় লোকজনের হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাদী হয়ে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রথম আলো বন্ধুসভা গোপালগঞ্জ জেলা শাখা ও বশেমুরবিপ্রবি শাখার মানববন্ধন
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন প্রথম আলো বন্ধুসভা গোপালগঞ্জ জেলা শাখা ও বশেমুরবিপ্রবি শাখার সদস্যরা। আজ দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মজনুর রশিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারী অধ্যপক মো. জামাল উদ্দিন, বন্ধুসভার সভাপতি সেলিম রেজা ও আশিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রহমান প্রমুখ।