ছানোয়ারকে দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের মাল্টাচাষি ছানোয়ার হোসেন তাঁর বাগানে
ছবি: কামনাশীষ শেখর

শুধু মাল্টা বিক্রি করেই এবার আট লাখ টাকা আয় করেছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ছানোয়ার হোসেন। তাঁর এই সাফল্য দেখে এ এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন মাল্টা চাষে।

২০১৭ সালে ছানোয়ার হোসেন মধুপুরের মহিষমারা গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে ২০০ মাল্টা চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তাঁর দুটি বাগানে ১ হাজার ২০০ মাল্টাগাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে ছানোয়ার ১০ লাখ টাকারও বেশি মাল্টা বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে আট লাখ টাকার ওপরে তিনি আয় করেছেন বলে জানান।

মহিষমারা গ্রামের কৃষক পরিবারের জন্ম ছানোয়ার হোসেনের। ১৯৯২ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর সিলেটে যান শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে। পাঁচ বছর সেখানে শিক্ষকতা করার পর নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। আগে থেকেই তাঁদের অঞ্চলে আনারস চাষ হতো। তিনি আনারস চাষ শুরু করেন। পরে আনারসের পাশাপাশি অন্যান্য ফল চাষের দিকে ঝোঁকেন। প্রথমে পেয়ারা চাষ করেন। ২০১৭ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ছানোয়ার মাল্টার চারা রোপণ করেন। পরের বছরই দু-একটি গাছে ফল আসে। সুমিষ্ট ও রসাল ফল দেখে তাঁর উৎসাহ বেড়ে যায়। আরও এক হাজার মাল্টা চারা রোপণ করেন পরের বছর। ২০১৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা বিক্রি শুরু করেন। গত বছর পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি।

ছানোয়ার হোসেন বলেন, এবার তিনি সাড়ে ৩০০ মণ মাল্টা বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ গড়ে দাম পেয়েছেন তিন হাজার টাকা করে। শুরুতে সবুজ এই মাল্টা ক্রেতাদের খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। কিন্তু সুমিষ্ট ও রসাল বারি-১ জাতের এই মাল্টার প্রতি ক্রমেই মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। চাহিদা থাকায় ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা মধুপুর এলাকায় এসে মাল্টা কিনে নিয়ে যান।

সরেজমিন মহিষমারা গ্রামে ছানোয়ারের ফলবাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব গাছের মাল্টা বিক্রি হয়ে গেছে। তবে কিছু মাল্টা রয়েছে। ছানোয়ার জানান, বেশি দিন রাখলে মাল্টার স্বাদ কেমন হয়, সেটা দেখার জন্য কিছু মাল্টা রেখে দিয়েছেন।

ছানোয়ারের মাল্টা চাষের সাফল্য দেখে আরও অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই ফল চাষে। মহিষমারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম এবার ৩০০ মাল্টাগাছ লাগিয়েছেন। তিনি জানান, ছানোয়ারের মাল্টা চাষে সফলতা দেখে এই ফল চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। তাঁর মতো এই গ্রামের হুমায়ন কবির, সাহেব আলীসহ আরও অনেকেই মাল্টার বাগান করেছেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনাতেও দু-চারটি করে মাল্টাগাছ রোপণ করা হচ্ছে।

মাল্টার পাশাপাশি ছানোয়ারের বাগানে ৫০০ পেয়ারা, ৬০০ ড্রাগন, ২০০ লেবু ও ১০০ ঔষধি গাছ রয়েছে। ছানোয়ার বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের মাল্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আর মাল্টা আমদানির প্রয়োজন হবে না; বরং মাল্টা রপ্তানিও করা যাবে।