ছুড়ে মারা দাহ্য পদার্থে পুড়ে গেল কিশোরীর মুখ

গরমের দিন। জানালা খোলা রেখে মেয়েটি ঘুমিয়েছিল মায়ের সঙ্গে। এর মধ্যে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে জানালা দিয়ে বাইরে থেকে এক ধরনের তরল দাহ্য পদার্থ এসে পড়ে মেয়েটির গায়ে। পুড়ে যায় চোখমুখ, গলা, হাত। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাণীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

মেয়েটির ভাষ্য, তার স্বামীকেই সে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে যেতে দেখেছে। দেড় বছর আগে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের চার মাস পর থেকে সে মায়ের বাড়িতে থাকছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান আফরোজা নাজনীন বলেন, কোনো রাসায়নিক পদার্থে মেয়েটির মুখের বাম অংশ পুরোটা পুড়ে গেছে। চোখের পাতাও পুড়ে গেছে। এ ছাড়া গলা ও বাম হাতের কনুই পুড়েছে। মুখের ত্বক পাতলা। পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এতে গভীর ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিন-চার দিন পরে বোঝা যাবে কেমন ক্ষতি হয়েছে।

পোড়ার ক্ষত অ্যাসিডের মতোই লাগছে। রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
আফরোজা নাজনীন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক

মেয়েটির নাম মাহবুবা খাতুন (১৫)। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবার নাম মাবুদ আলী। বাবা একজন ট্রাকচালক। আর মাহবুবার স্বামীর নাম মুরাদ আলী। তিনি ট্রাকচালকের সহকারী। মুরাদের বাবার নাম রাফিকুল। বাড়ি উপজেলার কুমরপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে মুরাদ পলাতক। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম জানান, মেয়েটির বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির দূরত্ব হাঁটা পাঁচ মিনিটের পথ। মেয়ে ও তার মা বলছেন, তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে মুরাদ আলীকেই দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। দেড় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করলেও পরে মাহবুবা আর মুরাদের সঙ্গে সংসার করতে চায়নি। তাই বাবার বাড়িতেই থাকত। গতকাল রাতে মাহবুবা তার মায়ের সঙ্গে একই ঘরে শুয়েছিল। ভোররাতে জানালা দিয়ে মাহবুবার মুখে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারা হয়।

ওসি জানান, মুরাদ বর্তমানে পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের ধারণা, অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা না করে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। শুধু বলা যায়, মুখে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারা হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়েটির বাবা বাসায় নেই। মা ও ভাই হাসপাতালে যাওয়ার কারণে তারা মামলা করতে আসেননি। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে তাঁরা মামলা করবেন।