ছেলেকে হারিয়ে মায়ের বিলাপ থামছেই না

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নদে ডুবে একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে মায়ের বিলাপ থামছে না। সোমবার বিকেলে শহরের বাজার ছিটপাড়া মহল্লায় ইয়াসমিন আক্তারের বাড়িতে
প্রথম আলো

‘ছেলেটাই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। ছেলেটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন নিমেষে শেষ হয়ে গেল।’ এ কথা বলে বিলাপ করছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের বাসিন্দা আইনজীবী ও প্রথম আলোর বন্ধুসভার সহসভাপতি ইয়াসমিন আক্তার। আজ সোমবার বিকেলে পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক সান্ত্বনা দিতে শহরের বাজার ছিটপাড়া মহল্লায় ইয়াসমিন আক্তারের বাড়িতে আসেন। এ সময় তিনি এভাবে বিলাপ করেন।

গতকাল রোববার দুপুরে ভোগাই নদে নেমে ইয়াসমিনের একমাত্র ছেলে ইসরাক হোসেন (১৫) মারা যায়। ছেলে হারানো মাকে সান্ত্বনা দিতে সোমবার দিনভর এলাকার মানুষ তাঁর বাড়িতে আসেন। বিকেলে ইয়াসমিনের বাড়িতে দেখা যায়, এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভিড়ের মধ্যে মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি জেবায়দা খাতুনও সেখানে রয়েছেন। এ সময় ইয়াসমিন ছেলের কথা বলে বিলাপ করছিলেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। এ সময় মেয়রসহ উপস্থিত সবাই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৮ বছর আগে ইয়াসমিনের সঙ্গে আজাহারুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে ইসরাক হোসেন নামের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ১০ বছর আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পাঁচ বছরের ইসরাককে নিয়ে ইয়াসমিন আলাদা হয়ে যান। পরে তিনি ছেলেকে বড় করার পাশাপাশি নিজেও এলএলবি শেষ করে আইনজীবী পেশা বেছে নেন। আইন পেশার পাশাপাশি ইয়াসমিন নালিতাবাড়ী প্রথম আলোর বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমে সদস্য থেকে একসময় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বন্ধুসভার সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলেকে বড় করার পাশাপাশি নিজেও এলএলবি শেষ করে আইনজীবী পেশা বেছে নেন ইয়াসমিন। পাশাপাশি নালিতাবাড়ী প্রথম আলোর বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমে সদস্য থেকে একসময় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ছেলে ইসরাক এ বছর তারাগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। রোববার দুপুরে সে বাড়ি থেকে আরও দুই বন্ধু মো. রনি (১৫) ও মো. রানাকে (১৫) সঙ্গে নিয়ে ভোগাই নদে গোসল করতে যায়। সাঁতার না জানায় বেশি পানিতে যেতেই তারা ডুবে যায়। এ সময় স্থানীয় এক কৃষক রনি ও রানাকে পানি থেকে উদ্ধার করেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে ইসরাকের ডুবে যাওয়ার কথা শুনে নদে তল্লাশি করেন। একপর্যায়ে ইসরাকের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতে শহরের শাহি জামে মসজিদে জানাজা শেষে ইসরাকের দাফন সম্পন্ন হয়।

তাঁদের স্বজন এ কে এম শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইসরাককে নিয়ে তাঁর মা ইয়াসমিন স্বপ্ন দেখতেন। ছেলেটা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু এভাবে একজন ছেলের মৃত্যুটা মেনে নেওয়াটা সত্যি কঠিন। সারা দিন মানুষ ইয়াসমিনকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে এসেছেন। কিন্তু মায়ের মন তো আর মানছে না। তিনি সবাইকে মা-ছেলের জন্য দোয়া করতে বলেন।