ছেলের পরিকল্পনাতেই মাকে পাঁচ টুকরা করা হয়: পুলিশ

নারীকে হত্যার পর পাঁচ টুকরা করে লাশ ধানখেতে ফেলে রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
প্রথম আলো

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ছেলের পরিকল্পনাতেই মা নুর জাহানের (৫৮) মুখে বালিশচাপা দিয়ে খুনের পর লাশ পাঁচ টুকরা করে পাওনাদারের ধানখেতে রেখে আসা হয়েছে, যাতে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সহজেই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাওনাদারকে সন্দেহ করেন। ওই নারী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানান।

গত বুধবার নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোছলেহ উদ্দিন মিজান দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

ঋণের প্রায় চার লাখ টাকা পরিশোধ নিয়ে দ্বিতীয় সংসারের ছেলে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কিছুদিন ধরে মায়ের বনিবনা হচ্ছিল না। এর জেরেই ঠান্ডা মাথায় মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হুমায়ুন।
মো. আলমগীর হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার

সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই ক্লুলেস ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর ছেলে হুমায়ুন কবির ওরফে হুমাসহ সাতজন এতে জড়িত ছিলেন বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতিমধ্যে হুমায়ুন কবিরসহ পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চরজব্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘খুনি’ ছেলে নিজেই মায়ের হত্যার ঘটনায় মামলা করতে ছুটে গেছেন থানায়। অবলীলায় বর্ণনা করে গেছেন ঘর থেকে মা নিখোঁজ হওয়ার কাহিনি। এতে তাঁদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শও করেছেন। একটি বিষয় পরিষ্কার হয়—ওই নারীকে যেভাবেই খুন করা হোক না কেন, লাশের টুকরাগুলো করা হয়েছে পেশাদার কাউকে দিয়ে। অর্থাৎ পেশাদার খুনি কিংবা কসাইশ্রেণির কেউ এই লাশ কাটাকাটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।

তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল আরও বলেন, প্রাথমিক ধারণা থেকে প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় নিহত নারীর ছেলে হুমায়ুন কবিরের বন্ধু মো. নীরবকে (২৬) ১৯ অক্টোবর সুবর্ণচরের চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ অক্টোবর রাতে স্থানীয় কসাই নুর ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এই দুজনের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনের নাম বেরিয়ে আসে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, নিহত নুর জাহানের প্রথম সংসারের ছেলে বেলাল হোসেন বছরখানেক আগে মারা গেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তির ঋণের প্রায় চার লাখ টাকা পরিশোধ নিয়ে দ্বিতীয় সংসারের ছেলে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কিছুদিন ধরে মায়ের বনিবনা হচ্ছিল না। এর জেরেই ঠান্ডা মাথায় মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হুমায়ুন। আর সেই হত্যাকাণ্ডে বন্ধু, প্রতিবেশী ও স্বজনের সহায়তা নেন তিনি।

পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে ওই নারীকে প্রথমে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ পাঁচ টুকরা করে প্রতিবেশী পাওনাদারদের ধানখেতে রেখে আসা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাংস কাটার ধারালো অস্ত্র, বঁটি, একটি কোদাল ও নারীর পরনে থাকা শাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা প্রথম মামলার বাদী নিহত নুর জাহানের ছেলে হুমায়ুন কবিরকে দ্বিতীয় মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে। তাঁর সহযোগী হিসেবে আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কসাইসহ দুজন ভাড়াটে, দুজন প্রতিবেশী ও দুজন স্বজন আছেন। এর মধ্যে দুজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

পুলিশ সুপার জানান, প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুবর্ণচরের চরজব্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল বাদী হয়ে নিহত নারীর ছেলেসহ সাতজনকে আসামি করে ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।