ছয় মাসে ১৪ বার লাইনচ্যুত ট্রেন, রেল যোগাযোগ বন্ধ ৯১ ঘন্টা

কুলাউড়া থেকে সিলেটগামী মালবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুত বগি। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা বাজার এলাকায় আজ শনিবার দুপুরেছবি. প্রথম আলো

ফের ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে সিলেট অঞ্চলে। এ নিয়ে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে ৬ মাসে ১৪ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৪টি এবং ৫ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। লাইনচ্যুতির ঘটনায় ৯১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ।
রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের হিসাবেই, ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সিলেট অংশে শুধু ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনাই ঘটেছে ৯টি। ওই বছরের ১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন, ২ জুন শায়েস্তাগঞ্জে কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, ২০ জুলাই একই স্থানে কালনী এক্সপ্রেস, ১৯ জুলাই কুলাউড়ায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ৪ সেপ্টেম্বর ও ১৬ আগস্ট একই এলাকায় উপবন এক্সপ্রেস, ১৭ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জে জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ২৯ ডিসেম্বর কুলাউড়ার বরমচালে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
ফেঞ্চুগঞ্জে মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ঢাকা ও সিলেটের পথে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বেশি ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। হবিগঞ্জের মাধবপুর, শাহজীবাজার ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঘটছে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা। গত বছরের ৩০ নভেম্বর কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় একটি সারবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা। কুলাউড়ার ভাটেরায় ১১ নভেম্বর মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৮ ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন

এর আগে ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রেলস্টেশনের কাছে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় ১৪ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ১১ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মোমিনছড়া এলাকায় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ ছিল ২ ঘণ্টা। ৭ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ ছিল ২৩ ঘণ্টা। ৫ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁওয়ের বিয়ালীবাজারের কাছে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যোগযোগ বন্ধ ছিল প্রায় ২৯ ঘণ্টা। শনিবার বন্ধ ছিল চার ঘণ্টা।
রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন লাইনচ্যুতির পেছনে নাজুক রেলপথ ও সেতুকে দায়ী করছে। ৫ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে বিয়ালীবাজারের কাছে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পেছনে চা-বাগান থেকে নেমে আসা ছড়ার সেতুর নড়বড়ে অবস্থাকে দায়ী করা হয়েছিল। পাগলাছড়া নামের ওই এলাকায় দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট সেতুর পুরোটাই নড়বড়ে। স্লিপারের সঙ্গে যেসব কাঠ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পুরোনো। যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেন সেখানে গতি কমিয়ে চলতে হয়। রেলওয়ের ৬টি ইউনিটের ২০০ কর্মী একটানা ২৪ ঘণ্টা সংস্কারকাজ করেন। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় চারটি অয়েল ট্যাংকার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার লিটার তেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন

প্রাথমিকভাবে একটি পাগলাছড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু দ্রুতগতিতে পাড়ি দিতে গিয়ে লাইনচ্যুতির ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করছেন রেলকর্মীরা। সেতু পেরিয়ে সিলেটমুখী প্রায় এক কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ মিটার স্লিপার, লাইন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাগলাছড়ার সেতুর কাঠের সব পাটাতন, স্লিপার ও স্টিল বডি ভেঙেছে।
রেলওয়ের সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরডিএম) সাদিকুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি জানতে পাঁচ সদস্যদের তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী সংস্কার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ কী ছিল, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরডিএম বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত। তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
পাগলাছড়ার সেতুর কাছে ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর ওই এলাকায় জরুরি সংস্কারের পর রেলের কালভার্ট সেতুতে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের কাছে বিয়ালীবাজারের কাছে ওই কালভার্টের নড়বড়ে অবস্থা মোকাবিলায় কাঠ ও বাঁশ রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাইজগাঁও রেলস্টেশনের মাস্টার মো. মনির হোসেন বলেন, এটা রেলের পথ শাখার কর্মীরা সতর্কতার জন্য করেছেন। কালভার্ট সেতুটি সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।