জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেয়, সেসব বই মেলায় রাখা যাবে না

চট্টগ্রামে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

যেসব বই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেয়, সেসব বই মেলায় রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে বইমেলা। বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

একুশের বইমেলা ঘিরে নানা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মেলায় ইসলামিক ও ধর্মীয় বই রাখা যাবে না, এমন অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এসব বই রাখা যাবে না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি। অবশ্যই ইসলামি বই রাখা যাবে। কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলতে চাই কোনো মৌলবাদী বই রাখা যাবে না। অনেক ইসলামি প্রকাশনা এখানে রয়েছে। কোনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় কান দেবেন না, গুজবে কান দেবেন না।’

করোনার কারণে গত বছর হয়নি চট্টগ্রামের বইমেলা। অমিক্রনের কারণে এবারও বইমেলা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। চট্টগ্রামে ১০ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরুর কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়। প্রস্তুতির অভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয় সেই তারিখও।

এদিকে মেলা শুরু হলেও এখনো সব প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় স্টলগুলো খালি দেখা গেছে। অনেক প্রকাশনী পুরোদমে চালু করলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

প্রথমার কর্মী ইব্রাহিম তানভীর বলেন, মেলার প্রথম দিন হিসেবে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি খারাপ নয়। তবে শুরুর দিনে বই কেনার চেয়ে মানুষজন মেলা ঘুরে দেখছেন বেশি। প্রিয় লেখকদের কী কী বই প্রকাশিত হয়েছে, তারও খোঁজ নিচ্ছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলায় ভিড় বেশি হবে, এমনটা আশা করেন তিনি।

উদ্বোধনী দিনেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন নগরের শুলকবহরের মোহাম্মদ আব্বাস নামের এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ঢাকার বইমেলায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই চট্টগ্রামের মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু গতবার মেলা না হওয়ায় খুব হতাশ হয়েছিলাম। এবারও মেলা হবে কি হবে না, তা নিয়ে নানা সংশয় ছিল। এখন মেলা শুরু হয়েছে। ভালোই লাগছে।’

প্রথম দিনে বইপ্রেমী পাঠকেরা ছুটে আসেন বই কিনতে
ছবি: প্রথম আলো

এবার চট্টগ্রামের বইমেলায় ১২০টি স্টল অংশ নিয়েছে। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার অনেক প্রকাশনীও অংশ নিয়েছে মেলায়। রোববার সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি শেষ করে স্টল চালু করে কথাপ্রকাশ। এই প্রকাশনীর কর্মী ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন আগে স্টল বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে ভালোভাবে সাজসজ্জার কাজ করা যায়। এবার এমন সময়ে স্টল দেওয়া হয়েছে, তা প্রস্তুত করতে খুব তাড়াহুড়া করতে হয়েছে।’

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) শংকর দাশ বলেন, মেলার পরিবেশ ভালো।

তবে আয়োজকদের কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। বিশেষ করে শৌচাগার–সংকট রয়েছে। এতে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বিপাকে পড়েন। এটির সমাধান করা উচিত।
প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১০টা থেকে। মেলা চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত।

আজ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম, মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।