জনবলসংকটে ব্যাহত গবাদিপশুর চিকিৎসা

জেলা কার্যালয়সহ চারটি উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে শূন্য ২২টি পদ। এর মধ্যে ১৬টি পদই পশু চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদ।

ঝালকাঠিতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়গুলোতে মোট পদের সংখ্যা ৬০। এর মধ্যে ২২টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। জনবলসংকটে দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গরু-ছাগলের খামারিরা। সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না তাঁরা। কোনো গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়লে চিন্তার শেষ থাকে না তাঁদের। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় বলছে, জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা কার্যালয়সহ চারটি উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে শূন্য ২২টি পদ। এর মধ্যে ১৬টি পদই পশু চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদ। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ১৬ পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৬টি পদ শূন্য। এর মধ্যে জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা, ভান্ডাররক্ষক, উচ্চমান সহকারী ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। সদর উপজেলায় ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ এক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ), উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রশাসন), উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য) ও অফিস সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে।

গবাদিপশুর রোগ দেখা দিলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায় না।
ইউসুফ হোসেন, আওরাবুনিয়া এলাকার খামারি

কাঁঠালিয়া উপজেলায় ১১টি পদের মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ এক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ভেটেরিনারি সার্জন, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ), উপসহকারী কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা, একটি এমএলএসএসসহ পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। নলছিটি উপজেলায় ১১টি পদের মধ্যে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ), উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রশাসন), উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য), একটি এমএলএসএসসহ চারটি পদ শূন্য রয়েছে। রাজাপুরে ১১টি পদের মধ্যে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার (সম্প্রসারণ) দুটি পদ শূন্য রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারটি উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের একাধিক পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকেই দাপ্তরিক কাজ করে মাঠের খামারিদের খোঁজ নিতে পারেন না। ফলে খামারিরা রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না। জেলায় ৪৫২টি গরু ও ৫৭টি ছাগলের খামার রয়েছে। এসব খামারে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫১টি গরু ও ৮২ হাজার ৫৯৬টি ছাগল রয়েছে। এত গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের। প্রতিদিন চারটি উপজেলা কার্যালয়ে অসংখ্য লোক তাঁদের গরু-ছাগল-ভেড়া ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা করাতে এসে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছেন।

খামারিদের অভিযোগ, আগে রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য খামারে বা বাড়িতে গিয়ে ভেটেরিনারি সার্জন বা অফিসের লোকজন গিয়ে চিকিৎসা দিতেন। এখন লোকবলসংকটের কারণে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসেও সঠিকভাবে আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

কাঁঠালিয়ার আওরাবুনিয়া এলাকার খামারি ইউসুফ হোসেন বলেন, গবাদিপশুর রোগ দেখা দিলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আসন্ন ঈদুল আজহায় গরু মোটাতাজাকরণে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা। এতে অনেকের লোকসান হতে পারে।

জনবলের অভাবে খামারিদের যথাযথ সেবা দিতে না পারার অভিযোগ স্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছাহেব আলী প্রথম আলোকে বলেন, জেলা কার্যালয়সহ চার উপজেলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এতে খামারিদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। তবে প্রতি মাসেই প্রতিটি অফিসের শূন্য পদের তালিকাসহ প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই এসব শূন্য পদ পূরণ হবে।