জব্বারের বলীখেলায় এক বেহালাবাদক
ঘড়ির কাটায় বিকেল ৫টা। সূর্য তখন হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। বিকেলের নরম আলোয় বসে একমনে বেহালায় সুর তুলছিলেন এক ব্যক্তি। বেহালাবাদকের ভক্ত জুটে যেতেও সময় লাগল না। তাঁকে ঘিরে কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ করছিলেন ভিডিও। বাজতে থাকা এক তারের বেহালা নিয়েও কৌতূহল দেখাচ্ছিলেন কেউ কেউ। জানা গেল বেহালাবাদকের নাম সালাউদ্দিন। গতকাল রোববার চট্টগ্রামে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায় নগরীতে দেখা মিলল সালাউদ্দিনের।
পঞ্চান্ন ছুঁই ছুঁই সালাউদ্দিন আদতে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা। নগরীতে এসেছেন মেলা উপলক্ষেই। আসছেন গত ৪০ বছর ধরেই। গত দুই বছর পারেননি করোনার কারণে। তবে এবার পরিস্থিতি একটু ভালো হতেই প্রিয় প্রাঙ্গণে হাজির তিনি।
সালাউদ্দিন জানালেন, প্রতিবছর মেলায় আসেন তাঁর অতিপ্রিয় বাঁশের তৈরি বেহালা নিয়ে। যা আনেন, সবই বিক্রি হয়ে যায়। বাদ্যযন্ত্রটি তিনিই তৈরি করেন। দাম রাখেন এক শ টাকার মতো। সালাউদ্দিনের কাঁধে ঝোলানো থলের ভেতর তখনো তিরিশটির মতো এক তারের বেহালা আছে।
সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রিবাট্টা মুখ্য বিষয় নয়। মেলার ঐতিহ্য হৃদয়ে ধারণ করেন বলেই প্রতিবছর আসেন। কিন্তু করোনা কেড়ে নিয়েছিল দুই বছরের আনন্দ। এবার তাই ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।
সালাউদ্দিনের বাবা-দাদাও এক তারের বেহালা বাদক ছিলেন। খুব যত্ন করে তাঁরা যন্ত্রটি বানাতেন। বাবার কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন বেহালা বাদন ও তৈরির প্রক্রিয়া। বাঁশের চিকন কাঠি আর তার দিয়ে এটি তৈরি হয়। একটাই তার থাকে এতে। একপ্রান্তে থাকে মাটির তৈরি গোলাকার ঢেপা।
সালাউদ্দিন জানান, দেশের নানা প্রান্তে তিনি ছুটে গেছেন। মেলায় এক তারের বেহালা বিক্রি করেছেন। অনেকেই পছন্দ করেছে। তবে চট্টগ্রামের মানুষজন এ বাদ্যযন্ত্রটি বেশি পছন্দ করেছে। এ কারণে বিক্রিবাট্টা হোক না হোক, তিনি চলে আসেন বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায়।
তিন দিনব্যাপী আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার ১১৩ তম আয়োজন শুরু হয়েছে গতকাল রোববার। তবে গত শনিবার মেলা শুরুর আগেই হাজির হয়েছেন শতাধিক বিক্রেতা। পণ্যের পসরা সাজানোর প্রস্তুতি চলেছে গতকাল সকাল পর্যন্ত। সকালে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় ছিল না। বেলা গড়াতেই মানুষ বেড়েছে। বিকেলে জমে ওঠে প্রাণের মেলা।