জরাজীর্ণ ঘরে কষ্টের বসবাস

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। তাই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার হাতিঘাটা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ঘরের টিনের চালে মরচে ধরে কিছু কিছু স্থানে ফুটো হয়েছে। কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষায় ঘরের ভেতরে টাঙানো হয়ে পলিথিন। বেড়ার টিন, কাঠ, টিনের দরজা ও জানালারও ভগ্নদশা। এমন জরাজীর্ণ ঘরেই বাস করছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৯০টি পরিবার।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, হরিরামপুরের ১৩টি ইউনিয়নের ১০টিই পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার। পদ্মাবেষ্টিত আজিমনগর, সূতালড়ি, লেছড়াগঞ্জ ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। ২০০০ সালে বসতভিটা হারানো ভূমিহীনদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা এলাকায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ১৯০টি ঘর নির্মাণ করে। হাতিঘাটা বাজারের পশ্চিম পাশের আশ্রয়ণের ১০০টি ঘর এবং পূর্ব পাশে ৯০টি ঘর রয়েছে।

আশ্রয়ণের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরেরই জরাজীর্ণ অবস্থা। চালের টিনে মরচে ধরে ফুটো হওয়ায় ঘরের ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে প্রায় প্রতিটি ঘরেই টাঙানো হয়েছে পলিথিন। ঘরের বেড়ার টিন মরিচা ধরে ভেঙে পড়ছে। টিনের দরজা ও জানালারও একই অবস্থা। আশ্রয়ণের ১৯টি নলকূপ ও ৪৬টি শৌচাগারের অবস্থাও খারাপ।

হাতিঘাটা বাজারের পশ্চিম পাশের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের পর সেখানে বসবাস করে আসছেন সামাদ আলী (৫০)। তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। পলিথিন টানাইছি, তাতেও কাজ হয় না। রাতের বেলা বৃষ্টি অইলে বসে জেগে থাকতে হয়।’ তিনি জানান, একবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এসে মেরামতের জন্য তালিকা করে নিয়ে গেলেও মেরামত করা হয়নি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, মেরামতের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি এলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। কষ্ট হলেও ঘরের ভেতরে পলিথিন টাঙিয়ে অনেকে বসবাস করছেন। আর্থিক সংকটে নিজ উদ্যোগে মেরামতও করতে পারছেন না বাসিন্দারা।

হাতিঘাটা বাজারসহ পশ্চিম পাশের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর তীর থেকে প্রায় ২৫০ গজ দূরে এ আশ্রয়ণের ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয়ণে আশ্রয় নিছি। কষ্টের মধ্যে থাকলেও এইখানে আশ্রয় হয়েছে। নদীতে যদি সেটাও ভাইঙ্গা যায়, তাইলে যামু কোথায়।’
হাতিঘাটা বাজারের পূর্ব পাশের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. ইসমাইল বলেন, এই আশ্রয়ণে ৯০টি পরিবার বসবাস করছে। নির্মাণের পর আর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। প্রায় প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী।

স্থানীয় আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ভূমিহীন পরিবারগুলোর আশ্রয়ের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর। প্রায় প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী ঘরগুলো মেরামত করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে কী কী মেরামত করা প্রয়োজন, সে তথ্য দিতে ইউপির চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মেরামতের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন ও বরাদ্দ পাওয়া গেলে ঘরগুলো মেরামত করা হবে।