জামালপুরে পরিস্থিতির অবনতি, কষ্টে দিন কাটছে বন্যার্তদের

জামালপুরের ইসলামপুরে পানি বেড়ে সড়কের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার সুরেরপাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চার দিন ধরে বাড়ির আঙিনায় বন্যার পানি। ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল। এলাকার রাস্তাঘাট প্লাবিত। বন্যার কারণে কোনো কাজও মিলছে না। চারপাশের মাঠঘাট তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে। তাই পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে আছেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সুরের পাড়া গ্রামের দিনমজুর ফেলু আকন্দ।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে একটি নৌকা নিয়ে তিনি গবাদিপশুর জন্য গাছের পাতা সংগ্রহণ করতে আসেন ঢেংগারঘর এলাকায়। এ সময় তিনি বলেন, পরিবারে পাঁচজন মানুষ। দিনমজুরির আয়েই সংসার চলে। বেশ কিছুদিন ধরে কাজ মিলছে না। তাই কাঁঠাল ও আমের ব্যবসা করতেন স্থানীয় বাজারে। বন্যার কারণে এক সপ্তাহ ধরে সেটাও বন্ধ রয়েছে। পুরো আয় বন্ধ। বাড়িতে বাজার সদাই না থাকায় ঘরে চুলা জ্বলে না। তার মধ্যে রান্না করার কোনো উপায় নেই। দিনে একবার ডাল-ভাত খাচ্ছেন। বাকি দুই বেলা শুকনা খাবার খেয়ে আছেন। হাতে টাকা না থাকায় চিন্তায় পড়েছেন তিনি। বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। কিন্তু কোথাও কেউ কোনো ধরনের সাহায্য–সহযোগিতা পাননি।

ফেলু আকন্দের মতো জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার অনেকেই বন্যার কারণে বিপাকে পড়েছেন। একে তো এলাকায় কাজকর্ম নেই, তার ওপর বন্যা যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। চারপাশে পানি আর পানি। ফলে আয়রোজগার না থাকায় বড় কষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁদের।

আরও পড়ুন

জামালপুরে গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মৎস্য খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার চারটি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৯টি পরিবার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৪ হাজার শুকনা প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

গবাদিপশুর জন্য গাছের পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন দিনমজুর ফেলু আকন্দ। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগারঘর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে। বিভিন্ন গ্রামের অভ্যন্তরীণ পাকা ও মাটির রাস্তার ওপর দিয়ে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। বন্যার্ত মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করছেন। ইসলামপুর-নোয়ারপাড়া সড়কের ওপর দিয়ে রোববার কম পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সেখানে হাঁটুপানির স্রোত দেখা যায়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেগে থাকা রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে। অনেক লোকজন অন্যত্র সরে যেতে দেখা গেছে।

সুরেরপাড়া গ্রামের আমেলা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, চার দিন ধরে ঘর-উঠানে পানি। আর কয়েক আঙুল পানি বাড়লে, ঘরের ভেতর পানি চলে যাবে। চার দিন ধরে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

শিংভাঙা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান কোমরসমান পানি ভেঙে মাথায় একটি বস্তা নিয়ে সড়কের দিকে আসছেন। মাথায় বস্তা নিয়ে তিনি খুব কষ্টে পানি ভেঙে সড়কে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাপু চার মিরে (চারপাশে) পানি। নিজেরা যেমন-তেমন গরু-ছাগলগুলারে-তো বাঁচুন লাগবে। পাথঘাট ডুইবা আছে। কোঠাও কোনো ঘাস জাইগা নাই। এই হুত (স্রোত) ভাঙে পাটের পাতা আনতে গেছিলাম। এই পাতা খাওয়াইয়া গরু-ছাগল বাঁচুন লাগবে। সবকিছু তলাইয়ে গেতাছে। সবার মরণ ছাড়া বুদ্ধি নাই।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পানি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ত্রাণসহায়তার বরাদ্দ দেওয়া হলেও দুর্গত এলাকায় এখনো ত্রাণসামগ্রী কেন বিতরণ করা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিতরণ কার্যক্রমটি উপজেলা পর্যায়ে হয়ে থাকে। তাঁরা কেন বিতরণ করছেন না, সেটা তাঁদের কাছ থেকেই শুনে নিতে পারেন।