মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সাংসদ মো. আবদুল খালেক ওরফে খালেক মণ্ডলসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণায় সাতক্ষীরায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পরপরই মুক্তিযোদ্ধা–জনতার ব্যানারে রায়কে স্বাগত জানিয়ে এই মিছিল বের করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে খালেক মণ্ডল ও খান রোকনুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আবদুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমির ও সাতক্ষীরা সদর আসনের সাবেক সাংসদ। তিনি সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর গ্রামের মৃত লালচাঁদ মণ্ডলের ছেলে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি জামায়াত নেতা খান রোকনুজ্জামান শহরের পলাশপোল এলাকার মৃত মহব্বত খানের ছেলে।
দুই জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের আবদুর রাজ্জাক পার্কে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ জড়ো হন। এরপর তাঁরা এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করেন। আনন্দ মিছিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকারের সভাপতিত্বে ও হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান, জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক রওনক বাসার, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শামীমা পারভীন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জামায়াত নেতা খালেক মণ্ডল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেন। সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জিদের বাড়ি লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেন। পরে বিধ্বস্ত ওই বাড়ির একটি ঘরে তিনি রাজকার বাহিনীর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে খান রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীরা এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন। ফলে আজকের এই প্রত্যাশিত রায়। এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ কলঙ্কমুক্ত হবে।
এদিকে জামায়াত নেতার রায়কে ঘিরে সাতক্ষীরা শহরসহ বৈকারী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আবদুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ আগস্ট তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ মার্চ খালেক মণ্ডলসহ সাতক্ষীরার চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে সাতক্ষীরার এম আবদুল্লাহ-আল-বাকী ওরফে আবদুল্লাহেল বাকী ও জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান মামলা চলাকালে মারা যান। রোকনুজ্জামান পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ রয়েছে।
খালেক মণ্ডলের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনকে হত্যা ও দুই নারীকে ধর্ষণ—এই তিন অভিযোগে খালেক মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, রোকনুজ্জামানকে ৪ অভিযোগের মধ্য ৩টিতে মৃত্যুদণ্ড, অন্য একটি অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।