জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কিশোর গ্যাং নেতা নুর মোস্তফা টিনু

নুর মোস্তফা টিনু

জামিনে মুক্তি পেয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং নেতা নুর মোস্তফা টিনু। তিনি কারাগারে বসে নির্বাচন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে জামিননামা আসার পর যাচাই–বাছাই করে বন্দী নুর মোস্তফাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এদিকে নুর মোস্তফাকে কারাফটকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা ভিড় জমান। মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে তাঁকে নিয়ে যান অনুসারীরা।

২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নুর মোস্তফাকে র‍্যাব চকবাজার এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে ১টি পিস্তল, ১টি শটগান ও ৭২টি গুলি উদ্ধার করা হয় তখন। এ ঘটনায় র‍্যাব পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করে। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর মামলাটির অভিযোগপত্রেও নুর মোস্তফাকে আসামি করে র‍্যাব। এই মামলায় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

জামিনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে তাঁর জামিন বাতিল হয়ে যায়। গত ২২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন নুর মোস্তফা। ওই দিনই আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কারাগারে বসে নুর মোস্তফা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী অংশ নেন। ভোট পড়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। আর তার মধ্যে মাত্র ৭৮৯ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মিষ্টিকুমড়া প্রতীকের নুর মোস্তফা ওরফে টিনু।

আরও পড়ুন

চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার এ বছরের ১৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে এ ওয়ার্ডের পদটি শূন্য হয়। তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেছা খানমও উপনির্বাচনে এবার প্রার্থী ছিলেন।

২০১৯ সালে নুর মোস্তফা গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথম আলোসহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নুর মোস্তফার নাম উঠে আসে। চকবাজার এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে কলেজ দুটিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বহিরাগত ও কিছু ছাত্রকে নিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ দল তৈরি করেন।

তাঁর দলের সঙ্গে ছাত্রলীগের ৫ বছরে ১৫ বারের বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাঁর গ্রেপ্তারের পর চকবাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছিলেন, নুর মোস্তফার ছেলেদের প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো তাঁদের।

আরও পড়ুন

চকবাজার কাঁচাবাজারের পাশে টমটম গাড়ির স্ট্যান্ড থেকেই প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে ৪০০ টাকা করে তুলতেন তাঁর অনুসারীরা।

নুর মোস্তফার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যেটি অভিযোগ, কিশোর গ্যাংদের ‘বড় ভাই’দের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। অবশ্য তিনি সব সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সেগুলোকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে অভিহিত করেছেন। সে সময় তিনি আরও বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দেওয়ায় তাঁর পথ রুদ্ধ করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।