জীবিত শিক্ষক যখন নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ‘মৃত’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মারুফা বেগম। শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সরকারি এই চাকরিজীবীকে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে মৃত দেখানো হয়েছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএফটির মাধ্যমে বেতন-বিল পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
মারুফা উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের ফজলুল হকের স্ত্রী। সম্প্রতি তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পরে মারুফার স্বামী এই তথ্য সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করেন।
মারুফার স্বামী ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রমের আওতায় ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মারুফা। অথচ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের লোকজন তাঁকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে রেখেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মারুফার জন্ম ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি।
শিক্ষকের পরিবার ও লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, মারুফা ২০১২ সালের ৩ মে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন-বিল দেওয়ার নতুন প্রক্রিয়া চালু করে। সম্প্রতি প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ইএফটির মাধ্যমে মাসিক বেতন পেতে আবেদন করতে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে যান মারুফা। কিন্তু সার্ভারে তাঁর আবেদন প্রক্রিয়াটি ভুল দেখায়। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করতে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন তিনি। তখন তিনি জানতে পারেন, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
শিক্ষকের পরিবার ও জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল ওই শিক্ষকের শাশুড়ি জয়বুন্নেছা বেগম (৭০) মারা যান। মারা যাওয়ার পর ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় জয়বুন্নেছা বেগমের নাম ও পরিচয়পত্রের নম্বর হিসেবে মারুফার পরিচয়পত্রের নম্বর দেওয়া হয়। দুজনের পরিচয়পত্রের নম্বরের মধ্যে শুধু শেষের সংখ্যাটি ভিন্ন।
মারুফা বেগম বলেন, ‘ইএফটির মাধ্যমে বেতন-বিল করতে গিয়ে আমি মৃত বলে জানতে পারি। এ কারণে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় ভোটার তালিকা থেকে আমার নামসহ সব তথ্য অপসারণ করে। একজন জীবিত ব্যক্তিকে কীভাবে তাঁরা মৃত দেখাতে পারেন? এখন আমি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-বিল কীভাবে তুলব?’
মারুফা বেগমের স্বামী ফজলুল হক বলেন, বিষয়টি সংশোধনের জন্য আবেদন করতে তাঁরা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র লাগবে।
উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হক বলেন, জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক। ওই শিক্ষক যে বেঁচে আছেন, এই মর্মে তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহ্বুব আলম বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় হয়তো ভুলবশত পরিচয়পত্রের কোনো সংখ্যা পরিবর্তনের কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে। মৃত্যুর কারণ ছাড়া অন্য কোনো কারণে কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিধান নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যথাযথভাবে আবেদনের পর ওই শিক্ষকের তথ্য হালনাগাদ করা হবে।