জোহার স্মৃতিফলক সরিয়ে সড়কের পাশে নিতে চায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন

রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলক
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ১৯৬৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশের ওই স্মৃতি বিজড়িত স্থানে রয়েছে একটি স্মৃতিফলক। তবে মহাসড়কটি বর্তমানে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ফলে ওই স্মৃতিফলকটি সেখান থেকে সরানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ড. জোহার স্মৃতিফলকটি রাস্তার দক্ষিণ পাশে নেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি একটি স্পর্শকাতর ও ঐতিহাসিক স্থান। এখনো তারা কোনো প্রস্তাব পায়নি। এ বিষয়ে প্রস্তাব পেলে কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

‘রাজশাহী নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ছয় লেন সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গত বছর থেকে শুরু হওয়া কাজটি এখন পুরোদমে চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সড়কের মধ্যে থাকবে দুই মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুই পাশে ১০ দশমিক ৫ মিটারের সড়ক থাকবে। সড়কের উভয়পাশে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশের ৩ মিটার ফুটপাত ও ড্রেন থাকবে। সড়কটির সৌন্দর্য বাড়াতে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে গাছ লাগানো হবে।

মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলায় স্মৃতিফলকটি সেখান থেকে সরানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সিটি করপোরেশন
ছবি: প্রথম আলো

তবে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চললেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অংশের উত্তর পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এই অংশের কাজে গতিও নেই। তবে রাস্তার দক্ষিণ পাশে কিছু অংশে ড্রেন তৈরির কাজ চলছে। ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ড. জোহার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানের স্মৃতিফলকের আশপাশেও কাজ চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেই ড. জোহার স্মৃতিফলকের অবস্থান। সেখানে লেখা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই স্থানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন’। এই ফলকের আশপাশে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে রাস্তার বিশাল ড্রেন নির্মাণ শেষে সেটি এখন দৃশ্যমান হয়েছে। এই স্মৃতিফলকের ভেতরে কিছু টবে ফুলের গাছ ছিল। তবে সম্প্রতি গাছগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ড. জোহার স্মৃতি বিজড়িত স্থানের স্মৃতিফলক বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মৌখিকভাবে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা চাচ্ছেন, স্মৃতিফলকটি রাস্তার দক্ষিণ পাশে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী নির্মাণ করতে। তাঁরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি আবেদন জমা দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে চাইবে, সেভাবে তাঁরা স্মৃতিফলকটি নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করে দেবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা যে জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেটা একটা ঐতিহাসিক স্থান। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করছে। তাঁরা মৌখিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানাননি। এ বিষয়ে জানালে তাঁরা এটি নিয়ে কমিটি করবেন। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।