জোয়ারের পানিতে কলাপাড়ায় বাঁধের ৩০০ ফুট ভেঙে গেছে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল। কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র এলাকায়
প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকা থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার ভেঙে গেছে। কলাপাড়া পৌরশহরের মাছ বাজার, হ্যালিপ্যাড মাঠ, ফেরিঘাট, বাদুরতলী জলকপাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট ও কাঁচা বাজার।

উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে করণীয় নির্ধারণ করতে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি এম সরফরাজ কলাপাড়ায় এসেছেন। তিনি দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের হাফেজ প্যাদার হাটে ‘দুর্যোগে করণীয় এবং জানমাল রক্ষায়’ মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে সভা করেছেন। এ সময় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু মোল্লা বলেন, সাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জোয়ারের পানি রাবনাবাদ নদের বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে ৫৪ নম্বর দেবপুর বাঁধের তিনটি পয়েন্ট ছুটে অন্তত ৩০০ ফুটের মতো ভেঙে গেছে। এতে দেবপুর গ্রাম পুরোপুরি তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ধানখালী ইউপির চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, তাঁর ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রাম থেকে ৩০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছুটে যাওয়ার কারণে নিশানবাড়িয়া, লোন্দা, মরিচবুনিয়া, দাসের হাওলাসহ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের চাপলীবাজার এলাকার বাসিন্দা কামাল হাসান বলেন, ঘের ও পুকুরের রুই, কাতল, সিলভার কার্প, পাঙাশ, গলদা চিংড়ি ভেসে গেছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের তাণ্ডবে গঙ্গামতি এলাকার পুরো সৈকত ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সৈকত-সংলগ্ন গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের ঘরের মেঝেতে পানি উঠে গেছে। সাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সৈকতে যাতায়াতের পিচঢালা সড়কের ওপর।

কুয়াকাটার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা সৈকত এলাকার জাতীয় উদ্যানের ঝাউবাগানের শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। ঝাউবাগান এলাকাও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে কুয়াকাটার ৪৮ নম্বর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাঝিবাড়ি পয়েন্ট ও পশ্চিম খাজুরা এলাকা। এখানকার বাঁধের বাইরের পাশের ঢালে যে সিমেন্টের ব্লকগুলো ফেলা হয়েছিল, তা পুরোনো হয়ে যাওয়ায় পানির চাপে ধসে পড়ছে।

রাবনাবাদ পাড়ের লালুয়া ইউনিয়নের চর চান্দুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মুন্সিপাড়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকার জলকপাট এলাকা আগে থেকেই ভাঙা ছিল। রাবনাবাদ নদের জোয়ারের প্রবল চাপে সেখান থেকে আরও দেড় থেকে ২০০ ফুট মাটি ভেঙে গেছে। এর ফলে পূর্ব চর চান্দুপাড়া, চর চান্দুপাড়া, বুড়োজালিয়া, মুন্সিপাড়া, নাওয়াপাড়া গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। রান্না করার চুলা পানিতে ডুবে গেছে। এখানকার স্থানীয় লোকজন হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় শুকনো খাবার কেনার জন্য ২৫ হাজার করে টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউপি ও পৌরসভার চেয়ারম্যানদের এই টাকা দেওয়া হয়েছে। ঝড়ের ভয়াবহতা বাড়লে উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’