জোয়ারে সোয়া দুই ফুট পানি বেড়েছে বাগেরহাটে, আশঙ্কা বাড়ছে

জোয়ারে নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। লোকালয়ে পানি তো ঢুকেছেই, পানি আরেকটু বাড়লে ঘরেও ঢুকে পড়বে। মঙ্গলবার দুপুরে মোরেলগঞ্জ উপজেলার সানকিভাঙ্গা গ্রামেপ্রথম আলো

পূর্ণিমার প্রভাবে নদ-নদীর পানি বাড়ায় আতঙ্ক বেড়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। পানি বাড়ায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে লোকজন। মঙ্গলবার দিনের বেলা পূর্ণ জোয়ারে নদীতে আগের দিনের চেয়ে সোয়া দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে প্লাবিত হয়েছে জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। তবে ভাটার সময় ওই সব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নয়, পূর্ণিমার প্রভাবেই দুই দিন ধরে জোয়ারে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বুধবার পূর্ণিমার পূর্ণগ্রাস ছাড়াও চন্দ্রগ্রহণ, ফলে জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও বেশি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসে বড় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

শরণখোলা উপজেলার ভোলা, বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, সদরের ভৈরব, দড়াটানাসহ জেলার সব কটি নদ–নদী ছাপিয়ে পানি নদীসংলগ্ন লোকালয় ও হাটবাজারে পানি ঢুকে পড়ে। পানগুছি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর ও উপজেলা খাদ্যগুদাম চত্বরে ঢুকে পড়ে। ছুঁই ছুঁই করছে শরণখোলার বগীগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা।

পাউবো জানায়, দুপুর ১২টার দিকে পূর্ণ জোয়ারে দড়াটানা নদীর পানির লেভেল ছিল ২ দশমিক ৬০ মিটার। এ নদীর স্বাভাবিক পানির সীমা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৪ মিটার। অর্থাৎ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, যার ফলে বেড়িবাঁধের বাইরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। তবে ভাটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই সব এলাকার পানি নেমে যায়।

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে লোকালয়–সড়ক। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা খাদ্যগুদাম চত্বরে
প্রথম আলো

মোরেলগঞ্জের সানকিভাঙ্গা গ্রামের আলী শেখ বলেন, তাঁদের এলাকায় পানগুছি নদীর পানি প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকের উঠান, বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। পানি যদি আরও বাড়ে, তবে ঘরেও পানি ঢুকে পড়বে।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতি হয়েছিল শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধ। বাঁধের সেই অংশ মেরামত করা হলেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি ওই জনপদের মানুষের। গাবতলা গ্রামের বলেশ্বর নদের তীরের বাসিন্দা হালিম শাহ বলেন, সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার জোয়ারের অনেক বেশি পানি বাড়ছে। জলোচ্ছ্বাস হলে রিংবাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় লোকালয় প্লাবিত হতে পারে।

পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, চন্দ্রগ্রহণ ও পূর্ণিমার কারণে এমনিতেই নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার জোয়ারের সময় শহরের দড়াটানা নদীতে প্রায় আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীতীরবর্তী কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অবশ্য ভাটার সময় ওই সব এলাকার পানি আবার নেমেও গেছে। জেলার উপকূলীয় চার উপজেলার মধ্যে শরণখোলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কাজ প্রায় শেষ। বাঁধ উঁচু করায় এবার সেখানে ঝুঁকি কম।

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়ক। মঙ্গলবার দুপুরে মোরেলগঞ্জের সানকিভাঙ্গা গ্রামে পানগুছি নদী সংলগ্ন সড়কে
প্রথম আলো

তবে মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার বড় একটি অংশই বেড়িবাঁধের বাইরে থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারে ওই তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। অমাবস্যা-পূর্ণিমা জোয়ারেই এসব এলাকা প্লাবিত হয়। সেখানে জলোচ্ছ্বাস হলে ঘরবাড়ির পাশাপাশি মৎস্যঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এসব এলাকায় মানুষের জীবিকার প্রধান মাধ্যম মৎস্য চাষ। গতবার আম্পানে তলিয়ে গিয়েছিল জেলার অধিকাংশ মৎস্যঘের। এ বাস্তবতায় মাছচাষিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘প্রতিটি দুর্যোগে বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবে এসব ক্ষতির পরিমাণ কম বলা হয়। জেলার চিংড়িচাষিরা ঘের রক্ষার্থে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া দেখা ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকবে না।’

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক। মঙ্গলবার দুপুরে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাড়ুইখালী গ্রামে
প্রথম আলো

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি আমাদের উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা কম। তারপরও যদি গতিপথ পরিবর্তন করে, সতর্কতা সংকেত বাড়লে আমরা উপকূলীয় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেব। এ জন্য ২৪৪টি স্থায়ী এবং ৬২৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’