জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বাসভাড়া বেড়েছে

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস শীতল পরিবহনের ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে সরকারি কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরপরই এই রুটে যাত্রীবাহী বাসগুলোর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জনপ্রতি ১৪ টাকা বেশি আদায় করছেন পরিবহনমালিকেরা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস শীতল পরিবহনের ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকারি ঘোষণা ছাড়াই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

আজ দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় উৎসব পরিবহনের কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডা করতে দেখা যায়। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বাসের আগে ভাড়া ছিল ৩৬ টাকা। বর্তমানে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

লোকমান আহমেদ নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার তো বাসভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় নাই। তাহলে পরিবহনমালিকেরা কীভাবে ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়!’

আরেক যাত্রী আল আমিন বলেন, সামান্য আয় দিয়ে পরিবার চালাতে হয়। ঢাকায় আসা–যাওয়ায় যদি ১০০ টাকা চলে যায়, তাহলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যায়। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি সরকার ও পরিবহনমালিকদের ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে উৎসব পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. আদর বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মালিকপক্ষের নির্দেশে তাঁরা ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। কিন্তু নতুন ভাড়া নেওয়ার সময় যাত্রীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে।

সরকারি ঘোষণা ছাড়াই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা
ছবি: প্রথম আলো

এই রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনও ভাড়া বাড়িয়ে ৫০ টাকা আদায় করছে। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী একমাত্র শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস শীতল পরিবহনের ভাড়া ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে।

শীতল পরিবহনের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস হোসেন জানান, তাঁদের প্রতি ট্রিপে (আসা-যাওয়া) ৩০ লিটার তেল লাগে। এদিকে তেলের দাম বাড়ায় ৪৫০ টাকা খরচ অতিরিক্ত বেড়েছে। বিআরটিএ ভাড়া না বাড়ালেও সে হিসাবে তাঁরা ভাড়া বাড়িয়েছেন।

তবে নারায়ণগঞ্জ-মিরপুর রুটে চলাচলকারী হিমাচল ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাসের ভাড়া অপরিবর্তিত আছে।

হিমাচল পরিবহনের সুপারভাইজার জামান মিয়া বলেন, তাঁরা এখনো ভাড়া বাড়াননি। এ বিষয়ে তাঁরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন।

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম ও বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহরের দাবি জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই করোনাকালে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অন্যায়, অমানবিক ও জনগণের প্রতি নিষ্ঠুরতা। এই বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি তাঁরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাক মোস্তাইন বিল্লাহ্ জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে ইচ্ছামতো বাসভাড়া আদায় করার বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে বিকেল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।