ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, ভোগান্তি

ভবনের তিনটি কক্ষের দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরছালাপাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে পড়ছে। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান
ছবি: প্রথম আলো

শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে দরজায় দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকায় শিক্ষার্থীরা। বসার পরও বারবার ওপরে তাকায় তারা। মনে তাদের ভয়, এই বুঝি ছাদ ভেঙে পড়ল। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করাতে গিয়ে শিক্ষকেরাও পড়ছেন বিড়ম্বনায়।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরছালাপাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চরছালাপাক ইউনিয়নে ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি তিন কক্ষের ও ২০০৫ সালে দুই কক্ষের আরেকটি পাকা ভবন নির্মাণ করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩০৫ জন শিক্ষার্থী ও ৭ জন শিক্ষক আছে। কিন্তু তখন নিম্নমানের কাজ হওয়ায় শুরু থেকেই তিন কক্ষের ভবনটির ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ত।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনের তিনটি কক্ষ জরাজীর্ণ। দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের ও ভবনের বিমের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী গৌরী রানী বলে, ‘ক্লাসোত বসি থাকতে ভয় নাগে। কখন ছাদ ভাঙি যায়। মাথাত গরমের সময় ছাদ থাকি ধুলা পড়ে। কাপড়, বই নষ্ট হয়া যায়। চোখে বালু ঢুকে জ্বালা করে। স্যারদের বললে বলে, নতুন স্কুল হবে। কিন্তু কোন দিন সেই নতুন স্কুল হবে?’

আরেক শিক্ষার্থী মুত্তাকিন ইসলাম বলে, ‘বর্ষাত টোপ টোপ করি পানি পড়ি গাও, বাই–খাতা নষ্ট হয়। গরমের সময় ধুলা পড়ে। একবার বইয়ের দিকে তাকাই তো আরেকবার ছাদের দিকে তাকাই। রুমে বসে থাকতে ভয় লাগে। স্যার যখন ক্লাস শেষ করে, তখন রুমের বাইরোত যায়া দাঁড়াই।’

চরছালাপাক গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক মাসুদ রানা বলেন, স্কুল ভবনটির বর্তমান যে অবস্থা, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাতে তাঁরা ভয় পান। তারপরও পাঠাচ্ছেন। কারণ, করোনার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থেকে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ক্লাস চলাকালে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা ছাদের দিকে তাকায়। বিদ্যালয়ের এই সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেহেরুল ইসলাম বলেন, শ্রেণিকক্ষের এমন অবস্থা দীর্ঘদিনের। অথচ উপজেলা শিক্ষা ও উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা শিলভীয়া খান বলেন, সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ পেলে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।