ঝুঁকি নিয়েই টিলার নিচে বসবাস করছে চিকনাগুলের আরও ২৫ পরিবার

টিলা ঘেঁষে ঘর তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বেশ কয়েকটি পরিবার। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরের মাটি এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজনি গ্রামে যাওয়ার পথে পড়ে ঠাকুরের মাটি গ্রাম। এই গ্রামের পাঁচটি পরিবার টিলার নিচে আবাস গড়েছে। ওই পাঁচটি ঘরে প্রায় অর্ধশত মানুষের বাস। তাঁরা বলছেন, টিলা এলাকায় তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বসবাস করে আসছেন। তবে এলাকায় টিলা ধসে হতাহতের ঘটনা এবারই প্রথম।

আজ সোমবার চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজনি গ্রামে টিলা ধসে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। টিলাধসের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন একই এলাকার অন্য বাসিন্দারা। চিকনাগুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আরও প্রায় ২৫টি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরের মাটি গ্রামের হিমুন্নুলি টিলার নিচে বসবাস করছে ওই পাঁচ পরিবার। এর মধ্যে একটি ঘর আধা পাকা এবং অন্যগুলো টিনের তৈরি। এই টিলার মাটি ধসে পড়ার চিহ্ন দেখা গেছে। এ ছাড়া টিলার মাটি কোদাল ও শাবল দিয়ে কেটে নেওয়ার চিহ্নও দেখা গেছে।

জৈন্তাপুরে সোমবার ভোরে বৃষ্টির মধ্যে ঘরের উপরে টিলা ধসে পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলায় চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

টিলার নিচের একটি ঘরের বাসিন্দা মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, রোববার সকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এতে টিলার মাটিগুলো নরম হয়ে ধসে পড়েছে। রাতে সে জন্য বাড়িতে থাকা হয়নি। ঘরের সদস্যদের স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

ঠাকুরের মাটি গ্রামের মো. হাসু মিয়া (৭০) বলেন, আগে টিলার ওপরের দিকে বাড়ি ছিল। পরবর্তী সময়ে টিলাধসের শঙ্কা থাকায় সেটি নিচে ঘর বাঁধতে হয়েছে। এখন পরিবারের তিন ছেলে তিন মেয়েসহ আটজন থাকেন। শুক্রাবারি বাজারে তিনি হোটেলের ব্যবসা করেন। টিলাটি ছাড়া অন্য এলাকায় তাঁর জায়গাজমি নেই। এ জন্য টিলার নিচেই বসবাস করতে হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম নামের বাসিন্দা বলেন, টিলার মাটি কাটা অপরাধ, সে জন্য টিলার মাটি কাটেন না তাঁরা। এদিকে টিলার ধসের শঙ্কা রয়েছে। দুই দিকেই বিপদ। টিলার মাটি না কাটলে ধসে ঘরের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-বাশিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ষা মৌসুমে টিলা এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়। টিলা এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, টিলা এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় না থাকলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সোমবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজনি গ্রামে টিলার মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়ে নিহত হয়েছেন জুবের আহমদ (৩৫), তাঁর ছেলে সফি আহমদ (৫), স্ত্রী সুমি আক্তার (২৮) ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী শামীমারা বেগম (৩৮)।