ঝুমনের জামিনের খবরে স্বস্তি, অপেক্ষা এখন বাড়ি ফেরার

ঝুমন দাশের মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর স্ত্রীসহ পরিবার
ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ছয় মাস পর জামিন পাওয়ায় সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশের (২৫) পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কারাবন্দী মামুনুল হককে নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি রানী দাশ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামীর জামিনের খবরে আমরা খুশি। এখন তিনি কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তি পেয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসবেন, আমরা এটাই চাই।’ ঝুমনের ছোট বোন মানিকা দাশ বলেন, ‘এই কয়েকটা মাস বড় কষ্টে কাটিয়েছি। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। জামিনের খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা দাদা আসার অপেক্ষায় আছি।’

মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ১৭ মার্চ সকালে ঝুমনের নিজ গ্রাম সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ের আশপাশের তিনটি গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে হামলা চালায়। সময় নোয়াগাঁওয়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ঝুমনকে ১৬ মার্চ রাতে আটক করে পুলিশ। পরের দিন তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ২২ মার্চ শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঝুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৭ মার্চ থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর তাঁর মুক্তির দাবিতে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়। সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশের আইনজীবী একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তাঁর জামিন হয়নি। পরে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।

এদিকে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনায় শাল্লা থানায় দুটি এবং আদালতে একটি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। অন্য দুটি মামলার মধ্যে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বাদী হয়ে থানায় একটি এবং ঝুমন দাশের মা নিভা রানী দাশ আদালতে আরেকটি মামলা করেন। এসব মামলার আসামি প্রায় দুই হাজার।

ঘটনার চার দিন পর ২০ মার্চ পুলিশ এই হামলার মূল উসকানিদাতা দিরাই উপজেলার নাসনি গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি গত ২১ জুন জামিন পান। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় করা মামলায় এ পর্যন্ত ১১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা জামিনে আছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঝুমন দাশ একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রেতার কাজ করতেন। পরে নিজেই প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী সুইটি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়েন। এই দম্পতির এক বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। এ ছাড়া পরিবারে তাঁর মা, এক ভাই ও দুই বোন আছেন। ঝুমনের আয়েই সংসার চলে।

সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাশ বলেন, ‘ঝুমন দাশের জমিনের সংবাদ পেয়ে ভালো লাগছে। আমরা খুশি। এখন উচ্চ আদালতের জামিনের কাগজপত্র সুনামগঞ্জে আসার পর আমরা সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিননামা দাখিলের আবেদন করব। আদালতের আদেশের কপি কারাগারে গেলেই তিনি মুক্তি পাবেন।’ ঝুমন দাশ সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন।